‘সরকার জমি দিছে, ঘর দিছে, আর কী চাই’

আবু বকর ও সাবিনা দম্পতি জমিসহ একটি আধা পাকা ঘর পেয়ে খুশি। গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুরের তারাগঞ্জে
ছবি: জাহিদুল করিম

আবু বকর-সাবিনা দম্পতির তিন সন্তান। তাঁরা পালা করে অন্যের ভিটায় থাকতেন। গত এক দশকে তাঁদের  তিনবার থাকার জায়গা বদলাতে হয়েছে। নিজেদের বসত-ভিটা না থাকায় তাঁদের এমন দুঃখ আর দুর্ভোগ।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের আবু বকর-সাবিনা দম্পতির দুঃখ এবার ঘুচেছে। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে তাঁরা সরকারের দেওয়া জমিসহ একটি আধা পাকা ঘর পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এই দম্পতির নামে ২ শতাংশ খাসজমি দলিল করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আগামীকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘর দেওয়া হবে।

ফরিদাবাদ থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি ক্যানেলের পাশে চালা করে থাকতেন আবদুল জব্বার। তিনি অন্ধ। স্ত্রী বাছিরনসহ ভিক্ষা করেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তিনিও জমিসহ ঘরের মালিক হচ্ছেন। উচ্ছ্বসিত জব্বার বলেন, ‘সরকার জমি দিছে, ঘর দিছে, গোসলখানা দিছে, রান্নাঘর দিছে। আর কী চাই!’

নুর বকশ, নুর বানু ও আমেনাদের পরিবারটিকে আর অন্যের জায়গায় থাকতে হবে না। গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুরের তারাগঞ্জে
ছবি: জাহিদুল করিম

আবু বকর-সাবিনা দম্পতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জমিসহ ঘরের মালিক হচ্ছেন। মুজিব বর্ষে সরকার ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফরিদাবাদে গিয়ে দেখা যায়, আবু বকর ও সাবিনা দম্পতি তাঁদের তিন বছরের ছেলে তামিমকে নিয়ে বসে আছেন নতুন বরাদ্দ পাওয়া জমিসহ ঘরের সামনে। কথা বলার একপর্যায়ে সাবিনার চোখ ছলছল করে ওঠে। তিনি বললেন, ‘শেখের বেটি হামাক ঘর দিছে। তায় ভালো থাক।’

ফরিদাবাদের নূর বকতের গল্পটি একটু ভিন্ন। তিনি ভূমিহীন ছিলেন না। গ্রামে কখনো রিকশা, কখনো দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু তাঁর দুঃসময় নেমে আসে মেজ মেয়ের বিয়ের সময়। সেই বিয়ের যৌতুকের জন্য তাঁর ৩ শতকের বসতভিটাটি বছর সাতেক আগে বিক্রি করে দিতে হয়। তারপর থেকে তিনি পরিবারসহ অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়ে আছেন। তিনি বলেন, এখন পরিবারসহ নতুন ঘরে উঠবেন।

ফরিদাবাদের এই আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেল, গুচ্ছাকারে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘরের সঙ্গে একটি রান্নাঘর, একটি সংযুক্ত টয়লেট ও ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রাখা হয়েছে। এখানে আশ্রয় পাবে ৯০টি পরিবার। ২০টি ঘর তৈরি হয়ে গেছে। বাকিগুলো নির্মাণাধীন।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা ঘর
ছবি: জাহিদুল করিম

তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান বললেন, এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় পাওয়া পরিবারগুলোর অবস্থা প্রায় একই রকম। তারা দুঃখী, গরিব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবারের দুঃখ লাঘব হবে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার পূর্ব কচুয়া গ্রামে নির্মাণাধীন আশ্রয়ণ প্রকল্পটির কাজ শেষ পর্যায়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ১৫টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরগুলোতে সোনালি রং দেওয়া হচ্ছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নাম দেওয়া হবে ‘স্বর্ণালি গ্রাম’।

পাড়াটিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসবাস। সেখান থেকে ১৫ ভূমিহীন পরিবারকে দেওয়া হবে জমিসহ ঘর।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলীমা বেগম বললেন, খাসজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা অনুযায়ী ইতিমধ্যে ১৫টি পরিবারের নামজারি ও কবুলিয়ত দলিলের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, জেলার ৮টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৮১৯টি গৃহ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শনিবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।