সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত’ চালাতে গিয়ে ধরা

প্রতীকী ছবি

কাউকে পরিচয় দিতেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক, কাউকে বলতেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এমন নানা পরিচয় দিয়ে সম্পর্ক তৈরি করে নারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ নানা পণ্য। সর্বশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে মাস্কবিরোধী অভিযানের নামে এক নারীর কাছ থেকে নগদ টাকা ও মুঠোফোন হাতিয়ে নেওয়ার সময় ধরা পড়েন এই ব্যক্তি।

আজ সোমবার বিকেলে বগুড়া শহরের চারমাথা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মো. ফরিদ মিয়া (২৭) নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বুজরুক নূরপুর গ্রামে। তবে আটকের পর তাঁর কাছে পাওয়া জাল জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজের নাম দিয়েছেন আতিকুর রহমান। উপজেলা ও জেলার নাম ঠিক থাকলেও পরিবর্তন করেছিলেন মা, বাবা ও গ্রামের নাম।

সরকারি লোগো ব্যবহার করে দুদক ও সিআইডির কর্মকর্তার জাল পরিচয়পত্র তৈরি ও তা ব্যবহার করে প্রতারণা করায় আটক ফরিদের বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তি স্বীকার করেছেন, তিনি অসংখ্য নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে সখ্য গড়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ নানা উপহার হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি পেশায় রাজধানীর ঢাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মী বলেও জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

বগুড়া জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ডিবির কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল একজন ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট বগুড়ার চারমাথা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান করছেন। গোয়েন্দা তথ্যের সূত্র ধরে ডিবির একটি দলকে নিয়ে সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখানে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার এক গৃহবধূর মুখে মাস্ক না থাকায় প্রতারক ফরিদ মিয়া তাঁকে থামান। নিজেকে সিআইডির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দুদকের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান পরিচয় দিয়ে ওই নারীকে মুখে মাস্ক না থাকা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। একপর্যায়ে ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত’ পরিচালনার কথা বলে ওই নারীর কাছ থেকে নগদ অর্থ ও মুঠোফোন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

নারীদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে সরকারি কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন ফরিদ। এরপর নানা কৌশলে হাতিয়ে নিতেন নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ নানা দামি উপহার।

এ সময় সেখানে উপস্থিত গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা কথিত ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে তিনি নিজেকে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট স্বীকার করেন। আটকের পর তাঁর দেহ তল্লাশি করে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াও সিআইডি ও দুদকের দুটি ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, নারীদের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করে সরকারি কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন ফরিদ। এরপর নানা কৌশলে হাতিয়ে নিতেন নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকারসহ নানা দামি উপহার।

ডিবির পরিদর্শক আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রাথমিকভাবে ২০-২৫ জন নারীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। এ ছাড়া তাঁর মুঠোফোনের কললিস্ট তল্লাশি করে আরও ৫০-৬০ জন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও প্রমাণ মিলেছে। তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।