সরকারি খালের ওপর কাটাখালীর মেয়রের নির্মাণাধীন দুই ভবন ভাঙা শুরু

সরকারি খালের ওপর কাটাখালীর মেয়রের নির্মাণাধীন ভবন ভাঙা শুরু হয়েছে। শনিবার সকালে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভা বাজারে
ছবি: শফিকুল ইসলাম

রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভায় সরকারি খালের ওপর মেয়র আব্বাস আলীর নির্মাণাধীন দুই ভবন ভেঙে দেওয়া শুরু করেছে প্রশাসন। আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে বুলডোজার দিয়ে ভবন ভাঙা শুরু করা হয়।

ভবন দুটি ভাঙায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট ও পবা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ এহসান উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ভবন উচ্ছেদ করার চিঠি পেয়েছিলেন। তাঁরা মেয়রকে ৩০ দিন আগে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে আইন অনুযায়ী আজ ভবন দুটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।

আজ সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল নয়টার মধ্যেই উচ্ছেদ কাজ শুরুর জন্য চলে আসে প্রশাসন। এই খবরে কাটাখালী বাজারে মানুষের ভিড় লেগে গেছে। এরপর শুরু হয় মেয়রের দুই ভবন ভাঙার কাজ।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপের জন্য চিঠি দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিটিতে বলা হয়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘খননের পর খালের ওপর ভবন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরের বিষয় তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। এই চিঠি দেওয়ার প্রায় দুই মাস পর ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করল প্রশাসন।

ভবনটি এমন সময় ভাঙা শুরু হলো যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মেয়র আব্বাস আলী কারাগারে। এ ছাড়া তিনি একই অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তাঁকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী ইতিমধ্যে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠিয়েছে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে বছরখানেক আগে কাটাখালী পৌরসভার ওপর দিয়ে যাওয়া খালটি ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পুনঃখনন করে। গত এপ্রিলের দিকে কাটাখালীর মেয়র সরকারি এই খালের ওপর ভবন নির্মাণ শুরু করেন। ১৯ জুলাই একতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সরকারি খালের ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে খালের ওপর প্রায় ১ হাজার ১৪৪ বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ শুরু হয়। এখানে ইতিমধ্যে দুইতলা ভবন উঠে গেছে। এই ভবন তিনতলা হবে। ভবনের দোকান হবে ২১টি। অন্যদিকে ব্রিজের উত্তর পাশে খালের ওপর আরেকটি ভবনের দুইতলা উঠে গেছে। এই ভবনে দোকান হবে মোট ছয়টি।
সরকারি খালের ওপর ভবন নির্মাণের অভিযোগ করেন পৌরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত আগস্ট মাসে পবা উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর কয়েক দিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরে আবার জোরেশোরে নির্মাণকাজ শুরু হয়।
এ নিয়ে গত ২৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর শেষ পাতায় ‘সরকারি খালে মেয়রের দুই ভবন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই দিনই ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন মেয়র। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় ‘খননের পর খালের ওপর ভবন’ শিরোনামে সম্পাদকীয় ছাপা হয়। এরপর বিষয়টি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের নজরে আসে।