সরকারি চাকরি করেও তিনি আ.লীগের নেতা

কারিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রহমত আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।

ঠাকুরগাঁও জেলা

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ভঙ্গ করে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার কারিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিতে জড়িয়েছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। নিয়মিত অংশ নেন দলের নানা কর্মসূচিতে।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ অংশে বলা আছে, সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গসংগঠনের সদস্য হতে অথবা অন্য কোনোভাবে যুক্ত হতে পারবেন না অথবা বাংলাদেশ বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে বা কোনো প্রকারের সহায়তা করতে পারবেন না।

কারিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক জানান, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বিদ্যালয়টিতে এখন পাঁচজন শিক্ষক রয়েছেন। রহমত আলী জাতীয়করণের আগ থেকেই সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে হরিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে রহমত আলী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ হবে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গত শনিবার বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত ওই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি রহমত আলীও বক্তব্য দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান, রহমত আলী শুধু শনিবারের সভায় বক্তব্য রেখেছেন, এমন নয়। দলের সব কর্মসূচিতেই তিনি অংশ নেন।

কারিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘রহমত আলী দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। শুনেছি তিনি এখন আর ওই পদে নেই। দলের কোনো কর্মসূচি থাকলে, তখন তিনি (রহমত আলী) ছুটি নেন। ছুটি নিয়ে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন কি না, তা বলতে পারছি না।’

রহমত আলী বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসেন কি না—এমন প্রশ্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক,অভিভাবক ও প্রতিবেশীরা এড়িয়ে যান। তাঁদের শঙ্কা, রহমত আলী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাঁরা হয়রানির শিকার হতে পারেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিদ্যালয় চলাকালেও আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে তাঁর (রহমত আলী) সরব উপস্থিতি নজরে পড়ে।

জানতে চাইলে রহমত আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি যখন বেসরকারি ছিল, তখন থেকেই সেখানে চাকরি করে আসছি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার আগেই উপজেলা আওয়ামী লীগের ওই পদ পেয়েছিলাম। বিধিমালার কথা ভেবে পদ থেকে ইস্তফাও দিয়ে রেখেছি। কিন্তু অনুমোদন হয়নি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান বলেন, সরকারি চাকরিজীবী কেউ ঝুঁকি নিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাইলে, এটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজার রহমান বলেন, এটা সরকারি কর্মচারী বিধিমালা পরিপন্থী। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।