সরকারি দপ্তরের কার্যক্রম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে

যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় পূর্ব পারের চৌহালী উপজেলা সদর হিসেবে পরিচিত খাসকাউলিয়া ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ।

নদীভাঙনে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে গোটা একটি উপজেলা। ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তো নদীতে গেছেই, বিলীন হয়ে গেছে উপজেলা পরিষদের সব কটি ভবন। আট বছর ধরে সরকারি বিভিন্ন কার্যালয়ের কাজ চলছে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ভবনে।

এটি যমুনার দুই পারের সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার চিত্র। পৃথক ভবন না থাকায় সরকারি কার্যালয়গুলোর কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটছে। আবার কার্যালয়গুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় মানুষজন নিরবচ্ছিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

আট বছর আগে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় পূর্ব পারের চৌহালী উপজেলা সদর হিসেবে পরিচিত খাসকাউলিয়া ও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের কিছু অংশ। নদীগর্ভে হারিয়ে যায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, অসংখ্য গাছপালা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট।

উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নদীর পূর্ব পারের খাসকাউলিয়া, বাঘুটিয়া, উমরপুর, খাসপুকুরিয়া ও ঘোড়জান এবং পশ্চিম পারের সোদিয়া ও চাঁদপুর ইউনিয়ন নিয়ে চৌহালী উপজেলা গঠিত। দেড় লাখ জনসংখ্যা–অধ্যুষিত এ উপজেলার আয়তন প্রায় ২১০ বর্গকিলোমিটার, ভোটার প্রায় ৯৮ হাজার।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, চৌহালী সরকারি কলেজের একটি ভবনে চলছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অস্থায়ী কার্যালয়। এই কলেজে ইউএনওর কার্যালয়সহ ১১টি সরকারি কার্যালয় রয়েছে। বাকিগুলো হচ্ছে উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), কৃষি, মহিলাবিষয়ক যুব উন্নয়ন ও সমবায় কার্যালয়। কলেজের পরিত্যক্ত আবাসিক ভবনে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয়, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়। কলেজের হোস্টেলে রয়েছে বিআরডিবি, পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা প্রধান ডাকঘর। কলেজ ছাত্র সংসদে রয়েছে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়।

চৌহালী ডিগ্রি কলেজের বিভিন্ন কক্ষে চলছে সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়, কলেজ ভবনের দ্বিতীয় তলায় চলছে চৌহালী থানার কার্যক্রম। কলেজের বিভিন্ন কক্ষে সোনালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা স্থানান্তর করা হয়েছে। আর চৌহালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাঁই হয়েছে খাসকাউলিয়া সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসা। উপজেলার কোদালিয়া দাখিল মাদ্রাসায় আছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর কার্যালয়।এভাবেই উপজেলা পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম চলছে।

উপজেলার উমারপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম বলেন, চৌহালী উপজেলা দীর্ঘদিন ধরে যমুনা নদীর ভাঙনে লন্ডভন্ড। উপজেলার সাধারণ মানুষ এখনো অনেকে জানেনই না, উপজেলাটির সরকারি কোন কর্মকর্তার কার্যালয় কোথায় স্থানান্তর করা হয়েছে। যে কারণে নাগরিক সেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উপজেলার চরধীতপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‍‍‍‘যমুনার ভাঙনের কারণে এখন অফিসগুলো ছিন্নভিন্ন, এখন নতুন অফিস খুঁজে বের করতেই দিন কেটে যায়। কাজ করব কখন? এক সময় এই উপজেলা হেডকোয়ার্টার অনেক সাজানো-গোছানো ছিল। পাশেই ছিল থানা ও হাসপাতাল।’

চৌহালী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল মান্নান বলেন, কলেজের কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য উপজেলা পরিষদ কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুটি টিনের ঘর তুলে দিয়েছে। সেখানে আপাতত পাঠদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম চলছে।

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পুনরায় চৌহালী উপজেলা পরিষদ স্থাপনের জন্য উপজেলার খাসপুকুরিয়া ইউনিয়নের চরকোদালিয়া মৌজায় ছয় একর জায়গা অধিগ্রহণের জন্য রাখা হয়েছে। সেখানেই নির্মিত হবে উপজেলা পরিষদের নতুন ভবন।