সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না বেশিরভাগ পরিবার

প্রশাসন বলছে, চরাঞ্চলের খাসজমিতে পুনর্বাসনের সুযোগ রয়েছে। তবে গৃহহীন পরিবারগুলো থাকতে চায় না।

শরীয়তপুর জেলা

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নদীভাঙনে গৃহহীন পরিবারগুলো এখনো পুনর্বাসনসুবিধা পায়নি। তারা গৃহহীন হয়ে আশপাশের ইউনিয়ন ও উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। অনেক পরিবার ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে রয়েছে। উদ্বাস্তু হওয়া এসব মানুষের ৮৩ শতাংশ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুফল পাচ্ছে না। একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি সংস্থা এসডিএস ও একশনএইড ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন প্রেক্ষিত: শরীয়তপুর’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পারটিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং বেসরকারি সংস্থা এসডিএস নড়িয়ার ৩টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় ১৩টি এলাকায় সমীক্ষা চালায়। ভাঙনের শিকার ২৫৪ ব্যক্তির মতামত নেওয়া হয়, যাঁরা বসতবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভাঙনে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে যাঁরা নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ উপজেলার ভোজেশ্বর, ফতেজঙ্গপুর, বিঝারি, ঘড়িসার ইউনিয়ন ও পাশের জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার এখান থেকে অনেকে ঢাকার বেগুনবাড়ি ও কল্যাণপুর বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের ৮৩ শতাংশ সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন না। জাতীয় পরিচয়পত্রে বিলীন হয়ে যাওয়া ঠিকানা থাকায় তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

শরীয়তপুর শহরের এসডিএসের সম্মেলনকক্ষে সেমিনারে অংশ নেন জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান, পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জামান, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হক, ইউএনও জয়ন্তী রুপা রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনল কুমার দে, এসডিএসের উপদেষ্টা মজিবুর রহমান প্রমুখ। সমীক্ষার ফল উপস্থাপন করেন এসডিএসের নির্বাহী পরিচালক রাবেয়া বেগম।

নদীভাঙনে নিঃস্ব নড়িয়ার ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জাকিয়া বেগম (৬০) সেমিনারে বলেন, তাঁদের পাঁচ বিঘা ফসলি জমি ছিল। ২০১৮ সালে বসতবাড়ি ও কৃষিজমি পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন শরীয়তপুর শহরের শান্তিনগর এলাকায়। সেখানে ভাড়া বাসায় কষ্টে দিন পার করছেন।

নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসমাইল হক বক্তব্যে বলেন, ২০১৮ সালের ভাঙনে নড়িয়ার সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনে পৌরসভার দুটি, মোক্তারেরচর ইউনিয়নে দুটি, কেদারপুর ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। ওখানকার বাসিন্দারা বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। উঁচু পাকা ভবন নির্মাণ করে তাঁদের ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করার আহ্বান জানান তিনি।

ইউএনও জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান। উপজেলায় ২৮০টি সরকারি ঘর দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া নদীভাঙনের শিকার ২৯৫টি পরিবারকে ৭৫ একর খাসজমি দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান বলেন, চরাঞ্চলে অনেক খাসজমি রয়েছে। সেসব স্থানে গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তাঁরা ওই সব এলাকায় গিয়ে থাকতে চান না।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ায় পদ্মার ডান তীর ও বাঁ তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ চলছে। দুটি প্রকল্পে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় অন্তত ১ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয় করছে। নদীর তীর থেকে স্রোত সরিয়ে নেওয়ার জন্য ১২টি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন খননযন্ত্র দিয়ে চর খনন করার কাজ চলছে। ২০২০ সালে নড়িয়ায় পদ্মার ডান তীরে ভাঙন ছিল না। এ বছর বর্ষায়ও যাতে কোনো ভাঙন না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখা হচ্ছে।