সরবরাহ চাহিদার দ্বিগুণের বেশি, এরপরও সিলেটে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট

বিদ্যুৎ নরবরাহ লাইন
প্রতীকী ছবি

সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) প্রায় চার লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এই গ্রাহকদের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৪৪ মেগাওয়াট। বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ৪৩০ মেগাওয়াট। তবে এরপরও ঘটছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। এক সপ্তাহ ধরে সিলেট নগরের বিভিন্ন জায়গায় তিন থেকে চার দফা বিদ্যুৎ–বিভ্রাটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ঘটলেও বিষয়টি লোডশেডিং নয় বলে জানিয়েছেন বিউবো সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের প্রকৌশলীরা। সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকার ফিডারগুলোতে মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্য সাময়িক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন তাঁরা। এ ছাড়া তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো সময় ট্রান্সফরমারের ফিউজ পুড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রেখে মেরামতকাজ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

সিলেট বিউবোর প্রায় চার লাখ গ্রাহক রয়েছেন। এই গ্রাহকদের প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৪৪ মেগাওয়াট। বিপরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় ৪৩০ মেগাওয়াট। তবে এরপরও ঘটছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট।

সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার লন্ড্রি ব্যবসায়ী রতন মল্লিক বলেন, গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রায় ১৫ মিনিটের মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এরপর সন্ধ্যার দিকে আবার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল কিছু সময়ের জন্য। পরদিন মঙ্গলবার আবার দুপুর ১২টার দিকে এক দফা এবং বেলা দেড়টার দিকে আরেক দফায় আধঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ আগে মধ্যরাতে টানা দুই ঘণ্টার মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, ‘ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মচারী রেখে কাজ করানো হয়। বিদ্যুৎ না থাকলে তাঁদেরও বসে থাকতে হয়। কিন্তু তাঁদের মজুরি ঠিকই আমাকে দিতে হচ্ছে। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’

নগরের বারুতখানা এলাকার ব্যবসায়ী রাহুল আহমদ বলেন, ‘গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে ৩ দফায় প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। এ সময় বারবার জেনারেটর চালাতে হয়েছে। পুরোপুরি গ্রীষ্মকাল কিংবা ঝড়বৃষ্টির মৌসুম আসার আগেই এমন অবস্থা হলে সামনের সময়ে কী হবে, এ নিয়েই চিন্তায় আছি।’

নগরের মীরাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল মজিদ বলেন, সামনে রমজান। সে সময়ও যদি একই অবস্থা হয়, তাহলে ভোগান্তি আরও বাড়বে। এর আগেও গত রমজানের সময়ে সাহরি ও ইফতার কিংবা তারাবির সময়ে বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বিদ্যুৎ–বিভ্রাট বেড়ে যাওয়ায় ঘরের বিদ্যুৎ–সংশ্লিষ্ট যন্ত্রগুলো বিকল হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে।

সিলেটে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুতের লাইন টানানোর কাজ চলছে। সেটি সম্পন্ন হয়ে গেলে ঝড়বৃষ্টি হলেও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ঘটবে না।
মোহাম্মদ আবদুল কাদির, বিউবো সিলেটের (বিক্রয় ও বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী

বিউবো সিলেট বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই-আরেফিন বলেন, সিলেট জেলায় বিউবোর প্রায় চার লাখ গ্রাহক রয়েছেন।এই গ্রাহকদের প্রতিদিন ১৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া এবং তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা কিছুটা বাড়তে পারে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ দ্বিগুণের বেশি রয়েছে। জেলায় বিদ্যুতের কোনো ঘাটতি নেই। তবে অনেক সময় সাময়িক মেরামত ও উন্নয়নকাজের জন্য কিছু সময়ের জন্য সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে এটিকে লোডশেডিং বলা যাবে না। আবার বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের ক্ষেত্রে অনেক সময় ট্রান্সফরমারের ফিউজ পুড়ে যাওয়া কিংবা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে পাখি বসে বৈদ্যুতিক গোলযোগ সৃষ্টির কারণ হয়েছে। সে সময় পুরো সঞ্চালন লাইন বন্ধ রেখে মেরামতকাজ করতে হয় বিধায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ রাখতে হয়।

বিউবো সিলেটের (বিক্রয় ও বিতরণ) প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল কাদির বলেন, ‘সিলেট জেলায় বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি রয়েছে। তবে বিদ্যুতের মেরামত, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমরা অধিক সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হলে গণমাধ্যমে প্রচার করি। তবে স্বল্প সময়ে মেরামতকাজ কিংবা উন্নয়নকাজ থাকলে দ্রুত সেটি করে সরবরাহ আবার চালু করি।’ তিনি আরও বলেন, সিলেটে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্যুতের লাইন টানানোর কাজ চলছে। সেটি সম্পন্ন হয়ে গেলে ঝড়বৃষ্টি হলেও বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ঘটবে না।