সরাইলে আরও এক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার–আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় এলাকায় হেফাজতের সমর্থকদের বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ। এ সমাবেশ থেকেই খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। গত ২৮ মার্চ দুপুরে তোলা ছবিপ্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ আরও এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম সুমন মিয়া (২৫)। তিনি উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের কাকরিয়া গ্রামের বাসিন্দা। অরুয়াইল বাজারে তাঁর মুঠোফোনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে পুলিশ তাঁকে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি পুলিশের দায়ের করা মামলার সন্দেহভাজন আসামি। এর আগে পুলিশ এজাহারনামীয় দুইজনসহ আটজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা সবাই বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।

অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আজ বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৭ জনই অরুয়াইল বাজারের ব্যবসায়ী।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ বেলা দুইটার দিকে অরুয়াইল বাজারে কয়েক হাজার হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের বিরোধিতা করে লাঠিসোঁটা নিয়ে অরুয়াইল বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ মাঠে তাঁরা সমাবেশ করেন। সমাবেশ চলাকালে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালান হেফাজতের সমর্থকেরা। এতে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবীর হোসেনসহ অন্তত ২০ পুলিশ সদস্য আহত হন।

এ ঘটনায় সরাইল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সজল চন্দ্র মজুমদার বাদী হয়ে ৩১ মার্চ রাতে ৬৫ জনের নাম উল্লেখ করে সরাইল থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ জনকে। মামলাটি তদন্ত করছেন সরাইল থানার এসআই মিজানুর রহমান। ২৭ মার্চের হামলার ঘটনায় ২৮ মার্চ থেকে অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় আজ বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৭ জনই অরুয়াইল বাজারের ব্যবসায়ী। একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক ও অন্যজন আওয়ামী লীগের সমর্থক।

ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্র দেখে এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেবল তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
আনিছুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল)

অরুয়াইল বাজারের ব্যবসায়ী গ্রেপ্তারের ঘটনায় ওই বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রেপ্তার–আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন জানান, ২৭ মার্চ অরুয়াইল বাজারে হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের যে মিছিল–সমাবেশ হয়েছে, এতে ওই সময়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সব ব্যবসায়ী দোকানপাট বন্ধ করে দেন। মূলত তাঁদের একটি অংশ ওই মিছিল–সমাবেশে অংশ নিয়েছে। কেউ আশপাশে ঘোরাঘুরি করেছে। এতে সবার মধ্যে এখন গ্রেপ্তার–আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ জন্য অনেকে দোকানপাট বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছেন।

হাইওয়ে থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল

এদিকে গত ২৮ মার্চ সরাইল বিশ্বরোড মোড় খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় হাইওয়ে থানার পুলিশের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। ওই ঘটনায় ৩১ মার্চ খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট মাইদুল ইসলাম বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি মামলা করেছিলেন। এ মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে তিন-চার হাজার জনকে।

মামলাটি তদন্ত করছিলেন হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। গত সোমবার রাতে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সরাইল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কবির হোসেনকে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা করা হয়েছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ৯ জন এবং খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় মামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্র দেখে তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ভিডিও চিত্র ও স্থিরচিত্র দেখে এবং অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার সঙ্গে যুক্তদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত কেবল তাঁদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।