সরিষা ও মৌমাছি চাষ করে লাভবান উভয় চাষিই

কালিহাতীর মগড়া ইউনিয়নের জোকাপাড়া গ্রামে সরিষাখেতের পাশে মধু আহরণের জন্য মৌমাছি পালন করছেন সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমান।  ছবি: প্রথম আলো
কালিহাতীর মগড়া ইউনিয়নের জোকাপাড়া গ্রামে সরিষাখেতের পাশে মধু আহরণের জন্য মৌমাছি পালন করছেন সাতক্ষীরার মতিয়ার রহমান। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের হলুদ রঙের সমারোহ। সরিষার এসব জমির পাশেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন চাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপর দিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। সমন্বিত এই চাষে সরিষাচাষি ও মৌচাষি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় এ বছর ৪১ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব খেতের পাশে প্রায় তিন হাজার মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এই বাক্স থেকে এবার ১০০ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উচ্চফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা কৃষকেরা চাষ করেন। দুই জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।

জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। কৃষকেরা যেমন মাঠে সরিষার পরিচর্যা করছেন, তেমনি খেতের পাশে মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।

গত মঙ্গলবার কালিহাতী উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের জোগাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা খেতের পাশে ১০০ মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছেন মতিয়ার রহমান। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা থেকে তিনি এসেছেন মধু সংগ্রহের জন্য। এই বাক্স থেকে পাঁচ থেকে সাত মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।

সদর উপজেলার গালা গ্রামে ১০৭টি বাক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরার মিলন সরদার ও মনিরুল ইসলাম। নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী শামছুল হক সেতুর পাশে ১২০টি বাক্স বসিয়ে মধু আহরণ করছেন একই জেলার আব্দুর রহমান। তাঁরা সবাই জানান, সাতক্ষীরা থেকে টাঙ্গাইল অঞ্চলে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ১৫ থেকে ২০ জন মৌমাছি খামারি এসেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের মৌচাষিরাও মধু সংগ্রহ করছেন।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সন্তোষ গ্রামের আমিনুল ইসলাম ৮০টি বাক্স বসিয়েছেন যমুনার চরাঞ্চলের কাতুলী গ্রামে। সংগ্রহ করা মধু ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন মধু সংগ্রাহকেরা।

দেলদুয়ার উপজেলার জাঙ্গলিয়া গ্রামে ৩৭টি বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন সাইফুর রেজা। তিনি খন্দকার সোহেলের সরিষা খেতের পাশে বাক্স বসিয়েছেন। খন্দকার সোহেল জানান, সরিষা খেত থেকে মধু আহরণ করলে পরাগায়ন হয়। এতে উৎপাদন বাড়ে। তাই তিনি ও আশপাশের জমির মালিকেরা মৌচাষিদের উৎসাহিত করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল রাজ্জাক জানান, মৌমাছি সরিষার ফুলে উড়ে উড়ে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই সরিষা খেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে সরিষার ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি মৌচাষিরা মধু আহরণ করে লাভবান হন।

বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন মৌ চাষ উন্নয়ন সংস্থার (মউস) নির্বাহী পরিচালক আবুল হোসেন জানান, টাঙ্গাইল অঞ্চলে ৭০০–৮০০ প্রশিক্ষিত মৌচাষি রয়েছেন। তাঁরা সরিষা খেত থেকে মধু সংগ্রহ করায় সরিষার উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি মধু আহরণ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারছেন।

মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন আবুল হোসেন।