সরিষাবাড়ীতে গ্রামবাসীর টাকা আর শ্রমে ৩১০ ফুট সেতু

জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চর রৌহা গ্রামের মানুষ নিজেদের টাকা আর শ্রমে কাঠের সেতু নির্মাণ করছেন
প্রথম আলো

ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চর রৌহা গ্রামে ঝারকাটা নদীর ওপর গ্রামবাসীর উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থায়নে কাঠের সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। কাঠের সেতুটির নির্মিত হলে ১৫টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবে।

কাঠের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। কাঠের সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ লাখ টাকা। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের চর রৌহা গ্রামের ভেতর দিয়ে ঝারকাটা নদী প্রবাহিত হয়েছে। চর রৌহা, ছাতারিয়া, চর সরিষাবাড়ী, নান্দিনা, বাঘমারা, আদ্রা, চুনিয়াপটল, জামিরা, নান্দিনা, দীঘলকান্দি, কোনারপাড়া, মাজারিয়া, সেংগুরিয়া, আতামারি ও সিধুলি—এই ১৫ গ্রামের মানুষকে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে ঝারকাটা নদী পার হতে হয়। ফলে ভোগান্তি তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।

সাতপোয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও চর রৌহা গ্রামের বাসিন্দা রেজাইল করিম বলেন, ২০১৩ সালে স্কুলে যাওয়ার সময় নৌকা ডুবে দুই শিক্ষার্থী দ্বিতীয় শ্রেণির অন্তর (৭) ও তৃতীয় শ্রেণির আনিছ (৮) মারা যায়। এরপর গ্রামবাসীকে নিয়ে বছরের পর বছর বসে ঝারকাটা শাখা নদীর ওপর কাঠের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ১ নভেম্বর গ্রামবাসীর সঙ্গে বৈঠকে বসে তিনি স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের অর্থে একটি কাঠের সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করেন। তাঁর প্রস্তাবে গ্রামবাসী সেতু নির্মাণে সাড়া দেন। গত ৭ নভেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রতিদিন গ্রামের নারী-পুরুষ পালা করে কাজ করে যাচ্ছেন।

গ্রামের আবদুস সামাদ (৫৬) বললেন, ভোটের আগে যিনি ভোট চাইতে আসেন, তিনিই বলেন যে নির্বাচিত হলে সেতু নির্মাণ করে দেবেন। কত ভোট গেল, সেতু হলো না। যোগাযোগ ভালো না হওয়ায় এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যা হয়। কেউ এই গ্রামে বিয়ের সম্বন্ধ করতে আসতে চান না। সব মিলিয়ে গ্রামের মানুষ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে কাঠের সেতু বানাচ্ছেন।

কাঠের সেতুটির দৈর্ঘ্য ৩১০ ফুট ও প্রস্থ ৮ ফুট। সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হবে প্রায় ১১ লাখ টাকা। গত ৭ নভেম্বর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে।

সাতপোয়া ইউপির চেয়ারম্যান আবু তাহের স্বেচ্ছাশ্রমে ও নিজেদের টাকায় চর রৌহাবাসীর কাঠের সেতু নির্মাণের খবরটি জানেন। তিনি বলেন, সেতু হলে ১৫টি গ্রামের ৯০ হাজার মানুষ সুফল পাবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সরিষাবাড়ী উপজেলার প্রকৌশলী রকিব হাসান বলেন, ওই গ্রামে পাকা সেতু নির্মাণের প্রাক্কালন তৈরি করে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিহাব উদ্দিন মনে করেন, এমন মহৎ কাজ দেশবাসীকে উদ্বুদ্ধ করবে।