‘সর্বনাশা’ নদীগুলো এখন চর, কোথাও নালা

জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদ–নদী এখন শুকিয়ে গেছে।

শুকিয়ে যাওয়া নদ এখন হেঁটে পাড়ি দেন স্থানীয় লোকজন। গত সোমবার কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে ব্রহ্মপুত্র নদে।
প্রথম আলো

গত বর্ষা মৌসুমেও কুড়িগ্রামে যে নদ-নদী বসতভিটা, ফসলি জমি ডুবিয়ে ভাঙন ধরিয়েছিল, তা এখন শুকিয়ে চর হয়েছে। কোথাও নালা আকৃতি ধারণ করে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। সেখানে হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন স্থানীয় লোকজন, বালুচরে চাষ হচ্ছে না ফসলও। জীবিকা হারাচ্ছেন জেলেরা, ইজারা নেওয়া অনেক ঘাটও এখন বন্ধ।

গত বছর অতিবৃষ্টি আর ছয় দফা বন্যায় দুধকুমার নদ ধারণ করেছিল ভয়ংকর রূপ। এর ভুক্তভোগীদের মধ্যে ছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের বাসিন্দা শাখাওয়াত হোসেন। তাঁর ভাষায়, ‘সর্বনাশা নদী (নদ) আর নদী নাই বাহে। শুকিয়া নালা হয়া গেইছে। মানুষ হাঁটি পার হয়। বালু পড়ি নদী ভড়াট হয়া গেইছে। যত দূর চোখ যায় খালি বালু আর বালু।’

শাখাওয়াতের শঙ্কা, বালু জমে ভরাট হওয়া এই নদ খনন না করলে আগামী বর্ষায় দুই কূল উপচে আবারও ডুববে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি।

দুধকুমারের মতো জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী এখন শুকিয়ে গেছে। এতে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে, বেকার হয়ে পড়েছেন মৎস্যজীবীরা। কুড়িগ্রাম শহরে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধরলা নদী। যাত্রাপুর হাটের পূর্ব দিকে এখন নদীর বুকে বিশাল চর। এই চর পেরিয়ে হাটে আসেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। দীর্ঘ বালুচর পেরিয়ে একটি নৌকার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েকটি নৌকা বাঁধা। দুটি নৌকার মাঝি আবদুস ছামাদ ও আনোয়ার হোসেন বলেন, নদীর যে অংশ পানি আছে, সেখানেও চর জাগছে। নৌকা আনতে কষ্ট হয়।

রাজীবপুর উপজেলার পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। উপজেলার রাজীবপুর হাটে সোবহান ব্যাপারী, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান বলেন, তাঁদের ছেলেবেলায় বছরের পুরোটা সময়ই নদীর এক পাশ থেকে অন্য পাশে দেখা যেত না। ভারত থেকে বড় জাহাজ ও নৌকা যাতায়াত করত। রাত–দিন নৌঘাটগুলোতে মানুষের ভিড় থাকত। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদী চর হয়ে যায়। আবার বন্যার সময় পানি উপচে পড়ে।

কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৬টি নদ-নদীতে মোট ১৭২টি নৌঘাট আছে। এগুলোর মধ্যে জেলা পরিষদের আওতায় ৫৭ ও ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ১১৫টি। পানি কমে যাওয়ায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ঘাটে নৌ চলাচল এখন পুরোপুরি বন্ধ। ২০টি বন্ধ হওয়ার পথে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর বন্যার সময় উজান থেকে পানির সঙ্গে প্রচুর বালু আসে। এতেই নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এগুলো খননকাজের বিষয়ে দেখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।