‘সহযোগিতা করলে বিপদ বাড়বে’ ভেবে অনেকে এগিয়ে আসেননি

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনে ঘুরতে গিয়ে গত শনিবার এক নারী দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন অভিযোগে মামলা হয়েছে। স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে স্টেশনের অদূরে নিয়ে দুর্বৃত্তরা দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে। স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কয়েকজনের কাছে সহযোগিতা চেয়ে পাননি তাঁরা। ‘সহযোগিতা করলে বিপদ বাড়বে’ ভেবে প্রথমে কেউ এগিয়ে আসেননি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত শনিবার রাত থেকে স্টেশন এলাকার মানুষ ধর্ষণের ঘটনাটির বিষয়ে জেনে যান। তাঁদের কয়েকজন বলেন, ওই নারীর স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করার আগে স্থানীয়দের কাছে তাঁকে মারধর করে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁকে সহযোগিতা করেননি। ‘সহযোগিতা করলে বিপদ বাড়বে’ বলে তাঁরা কেটে পড়েন। তাঁকে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তিনি ৯৯৯-এ কল দেন।

তবে পরে বিপদের কথা শুনে একপর্যায়ে স্থানীয়দের কয়েকজন এগিয়ে যান। তাঁরা অপরাধীদের দুজনকে দেখতে পান। পরে স্থানীয় লোকজন রাজীব ও রিফাতকে ধরে পুলিশে দেন।

গতকাল রোববার নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামী দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ভৈরব রেলওয়ে থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন ঘোড়াশাল পৌর এলাকার টেনগড়পাড়া এলাকার মৃত শাহ আলমের ছেলে মো. রাজীব (৩০), চামড়াবো বাজার এলাকার মো. নজরুল ইসলামের ছেলে মো. রিফাত হোসেন ওরফে জাফর (২০) এবং ওপেনার (৩০) নামের এক ব্যক্তি। ওপেনার এখনো পলাতক। ভৈরব রেলওয়ে থানা সূত্র জানায়, ওপেনারের খোঁজে পুলিশ সক্রিয়। তাঁকে গ্রেপ্তারে একাধিক জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুন

আজ সোমবার রাজীব ও রিফাতের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাঁদের ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা মূলত স্টেশন এলাকায় বেশি ঘোরাঘুরি করেন। সবাই তাঁদের বখাটে ও মাদকাসক্ত হিসেবে চেনেন। ওপেনার সম্পর্কে স্থানীয়দের ভাষ্য, ওপেনার প্রকৃত নাম নয়। এটি স্থানীয়দের দেওয়া নাম। তিনি এলাকায় ‘অপরাধী’ হিসেবে পরিচিত। থাকেন স্টেশন এলাকার আশপাশে। স্থানীয়রা বেশ কিছুদিন ধরে রাজীব, ওপেনার ও রিফাতকে একসঙ্গে চলাফেরা করতে দেখেছেন।

আরও পড়ুন

ঘটনার পর থেকে নির্যাতনের শিকার ওই নারীর স্বামীর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। কখনো কখনো ফোন খোলা পাওয়া গেলেও তিনি ফোন রিসিভ করছেন না। ফলে তাঁর ভাষ্য জানা সম্ভব হয়নি।

গত শনিবার ছুটির দিনে কর্মজীবী ওই স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে ঘুরতে যান ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশনে। সেখানে গিয়ে ঝালমুড়ি কিনে খাওয়ার সময় তিন ব্যক্তি এসে তাঁদের পরিচয় ও সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চান। পরে যাচাইয়ের নামে তাঁদের দুজনকে নির্জন স্থানে যেতে বলেন। তাঁরা যেতে না চাইলে ওই নারীর স্বামীকে মারধর করা হয়। পরে স্টেশন থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে টান ঘোড়াশাল স্টেশনের কাছাকাছি একটি নির্জন স্থানে নিয়ে রেললাইনের মাঝের খালি জায়গায় ওই নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন।