সহিংসতায় জেলে নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা, গ্রেপ্তার ১

গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক জেলে নিহত ও পাঁচজন আহত হন।  ওই জেলে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবি করে মঙ্গলবার উপজেলার চর ফকিরা গ্রামের বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে চরফ্যাশন থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে নিহত মনির হোসেনের (২৫) জানাজার পরে এ বিক্ষোভ মিছিল হয়। মিছিল চলাকালে গ্রামবাসী মনির হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে বিচারের দাবি জানায়। একই সঙ্গে নিহত জেলের পরিবারকে আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করার দাবি জানান। মনিরকে হত্যার অভিযোগে তাঁর বাবা বশিরুল্লাহ মিস্ত্রি সোমবার রাতে বাদী হয়ে শশীভূষণ থানায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। পুলিশ ওই মামলায় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী সদস্য প্রার্থী ইউসুফ শিকদারের ছেলে মো. রিয়াদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরা গ্রামে সোমবার ইউপি নির্বাচন চলাকালে সোমবার জেলে মনির হোসেন নিহত ও নারী-শিশুসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়। দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় নিহত মনির হোসেনের বাবা বশিরুল্লাহ বলেন, তিনি অসুস্থ। কোনো কাজ করতে পারতেন না। তাঁর ছেলে মনির মাছ ধরে সংসার চালাতেন। মনিরের চারটি বোন ছিল। তিনি তাঁদের কষ্ট করে বিয়ে দিয়েছেন। এখন নিজে বিয়ে করার জন্য টাকা জমা করছিলেন। সোমবার বেলা ১১টায় তাঁর ছেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান।

স্থানীয় ব্যক্তিরা আরও জানান, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তাঁরা হলেন মো. রুহুল আমিন, মো. ইয়াছিন মাঝি ও মো. ইউসুফ শিকদার। ইউসুফ শিকদার সোমবার বেলা ১১টার দিকে দক্ষিণ চর ফকিরা কো-এইড প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের (মহিলা) গেট আটকে ভেতরে সিল মারতে শুরু করেন। একই সময় কেন্দ্রের বাইরে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী ইয়াছিন মাঝির কর্মীদের ধাওয়া করে। দুই পক্ষ কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় ভোটাররা গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইমাম হোসেনের নির্দেশে পুলিশ গুলি চালায়। কেন্দ্রে সংঘর্ষ ও গুলিতে মানুষ নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ভোট গ্রহণ বন্ধ করেননি। যার কারণে ভোট না পড়ার পরেও ৮৪৯ ভোট পেয়ে ইউসুফ শিকদার নির্বাচিত হয়েছেন।

হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চর ফকিরা কো-এইড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, ‘ওই সময় পানির কল প্রতীকের প্রার্থী ইউসুফ হোসেন শিকদার ভোট দেখতে কেন্দ্রে আসেন। তখন দোতলায় ১০০–১৫০ ভোটার দাঁড়ানো ছিলেন। আমরা তিনতলায় সুন্দরভাবে ভোট নিচ্ছিলাম। এ সময় লোকজন কেন্দ্র দখল করতে আসছে। তারা দোতলার একটি গেটের তালা ভেঙে ফেলেছে। তৃতীয় তলার গেটের তালাও ভেঙে প্রবেশের চেষ্টা করা হচ্ছিল। এ সময় ২০০-২৫০ লোকের জীবন বাঁচাতে আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়েছি।’

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিন বলেন, প্রিসাইডিং কর্মকর্তার গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ইউএনও আরও বলেন, ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে নিহতের পরিবারকে সাহায্য করা হবে।

তবে সিল মারার অভিযোগ অস্বীকার করে নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য ইউসুফ শিকদার বলেন, তাঁর ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। কেন্দ্রে সংঘাত-সংঘর্ষ চালিয়েছে রুহুল আমিন ও ইয়াছিন মাঝির লোকজন। তারাই কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গুলি চালাতে বলেন।

শশীভূষণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিপক্ষের গুলিতে ইয়াছিন মাঝির সমর্থক মনির হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে চর ফকিরা গ্রামের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে তাঁরা সেখানে টহল বাড়িয়ে দেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। তবে আর কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।