সাংসদ একাব্বর হোসেনের দাফন সম্পন্ন

সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেনকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. একাব্বর হোসেনকে আজ বুধবার দাফন করা হয়েছে। তাঁর নিজ গ্রাম মির্জাপুরের পোষ্টকামুরীতে আজ আসরের নামাজের পর তৃতীয় জানাজা শেষে তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।  

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার ধানমন্ডিতে বায়তুল আমান মসজিদে সাংসদ একাব্বর হোসেনের প্রথম জানাজা হয়। এরপর আজ জোহরের নামাজের পর মির্জাপুরের শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সাংসদ একাব্বর হোসেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। বুধবার সকালে সাংসদ একাব্বর হোসেনের লাশ মির্জাপুরে আনা হলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, দুপুর ১২টা থেকে উপজেলা সদরের সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়। সকালেই টাঙানো হয় কালো পতাকা। শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে জানাজার আগে মো. একাব্বর হোসেনকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনির উপস্থিতিতে পুলিশের চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।

গতকাল ধানমন্ডিতে জানাজার আগে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, সংসদের হুইপ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মরহুমের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বুধবার মির্জাপুরে জেলা পরিষদ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মির্জাপুর প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক–রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সাংসদের রাজনৈতিক জীবনের ওপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান, জেলা প্রশাসক মো. আতাউল গনি। আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আইনজীবী জোয়াহেরুল ইসলাম, টাঙ্গাইল সদর আসনের সাংসদ ছানোয়ার হোসেন, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক শামীম আল মামুন, সাংসদের ছেলে ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন প্রমুখ।

দ্বিতীয় জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে সাবেক সাংসদ আমানুর রহমান খান ও অনুপম শাজাহান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা উপস্থিত ছিলেন। মির্জাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সালাউদ্দিন আশরাফী জানাজা পড়ান।

কিডনির জটিলতার জন্য সাংসদ একাব্বর হোসেন নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতেন। গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে গেলে সেখানে অসুস্থ হলে তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরদিন সিটি স্ক্যান পরীক্ষায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে ওই দিনই তাঁকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি দীর্ঘ ২৬ দিন লাইফ সাপোর্টে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। গতকাল দুপুরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

একাব্বর হোসেন ১৯৫৬ সালের ১২ জুলাই পোষ্টকামুরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন। তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্যও ছিলেন। ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৮ সালে হল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। মির্জাপুর উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০ সালে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ সালে থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।