সাংসদ রেজাউল করিমকে দুদকে তলব

সাংসদ রেজাউল করিম

বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় ১৪ মার্চ আলোচিত এই সাংসদকে দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে সম্পদের যাবতীয় নথিসহ ব্যাখা প্রদানের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

রোববার বার্তাবাহকের মাধ্যমে দুদকের নোটিশ সাংসদ রেজাউল করিমের হাতে পৌঁছানো হয়। দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম সাংসদ রেজাউল করিমের নামে এই নোটিশ পাঠান।

আমিনুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে সাংসদ রেজাউল নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে সাংসদের বিরুদ্ধে। তাঁর বগুড়ায় নির্মাণাধীন বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত তিনটি গাড়ি কেনার তথ্য আছে, যা হলফনামায় নেই। এর মধ্যে বিপুল টাকায় শুল্কমুক্ত একটি বিলাসবহুল পাজেরোও আছে তাঁর। নামে–বেনামে অবৈধ অর্থবিত্ত অর্জনের অভিযোগ পেয়ে তাঁকে যাবতীয় সম্পদের নথিসহ দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে তাঁর নিজের এবং স্ত্রী, সন্তান ও পোষ্যদের নামে স্থাবর–অস্থাবর সম্পদের দালিলিক নথি, নিজ ও স্ত্রীর নামে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সত্যায়িত কপি এবং পাসপোর্টের কপি সঙ্গে আনতে বলা হয়েছে।

রোববার রাত নয়টার দিকে দুদকের নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে সাংসদ রেজাউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই। একটি শুল্কমুক্ত ল্যান্ডক্রুজার পাজেরো এবং একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস আছে। ঢাকায় কোনো ফ্ল্যাট নেই। সশরীরে গিয়ে সম্পদের সব নথি দুদকে দেখানো হবে।’

হঠাৎ বনে যাওয়া সাংসদ
বগুড়া-৭ আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান গাবতলীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে বিএনপির প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ে।

রেজাউল করিম ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। দলীয় প্রার্থী না থাকায় শেষ মুহূর্তে রেজাউল করিমকে বিএনপি থেকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ট্রাক প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।

‘ভাইরাল’ সাংসদ
সাংসদ রেজাউল নানা আলোচনা–সমালোচনার জন্ম দিয়ে একাধিকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন। এর মধ্যে গত বছরের অক্টোবর মাসে কালো রঙের নতুন ঝকঝকে একটি পিস্তল হাতে হাসিমুখে তোলা তাঁর একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সাংসদ রেজাউলকে নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। অস্ত্র হাতে হাসিমুখে ফেসবুকে একটি ছবি পোষ্ট করে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।

গত বছরের ১৭ নভেম্বর জাতীয় সংসদে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ (সংশোধন) বিল, ২০২০ পাস হয়। এতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই বিল পাসের আগে আইনের পক্ষে–বিপক্ষে সংসদে অনেক সাংসদ কথা বলেছেন। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বগুড়ার সাংসদ রেজাউল সংসদে বলেন, নারীমুক্তির নামে নারীবাদীরা নারীদের স্বাধীন হতে উৎসাহিত করছেন। এতে ধর্ষণকারীরা ধর্ষণে উৎসাহিত হচ্ছে। এসব নানা কথা বলে তিনি আলোচিত হন।