সাংসদের ভাই–ভাতিজার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ

সুনামগঞ্জ জেলার মানচিত্র

সুনামগঞ্জের ধরমপাশায় ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর, অবরুদ্ধ করে রাখা ও প্রাণনাশের চেষ্টায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতনের বড় ভাই মোশারফ হোসেন ওরফে মাসুদ (৫৮) ও মাসুদের ছেলে তানভীর হোসেন ওরফে সাগরের (২৪) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা বিকাশ রঞ্জন সরকার।

মোশারফ হোসেন ধরমপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। ভুক্তভোগী বিকাশ রঞ্জন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিদর্শক পদে কর্মরত। তিনি ধরমপাশা সদর ইউনিয়নের ধরমপাশা গ্রামের বাসিন্দা। আজ মঙ্গলবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে ধরমপাশা থানায় তিনি লিখিত অভিযোগটি দেন।

অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ, এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকাশ রঞ্জন সরকারের (৫৫) গ্রামের বাড়ি উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের পাইকুরাটি গ্রামে। গ্রামের পাশেই পাইকুরাটি নতুন বাজার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরের ধরমপাশা গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন। পাইকুরাটি নতুন বাজারে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার একই দাগে ১৯ শতাংশ জায়গা রয়েছে। সম্প্রতি তিনি সেখান থেকে পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন। এই জমিতে থাকা স্থাপনা সরাতে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি সেখানে যান। বেলা সোয়া একটার দিকে সেখানে আসেন সাংসদের বড় ভাই মোশারফ হোসেন। তাঁর বাড়ি পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে। বর্তমানে তিনি পাইকুরাটি নতুন বাজারে বসবাস করে আসছেন।

মোশারফ ওই স্থাপনার কাছাকাছি এসেই বিকাশকে উদ্দেশে বলেন, ‘বিকাশ বাবু তো ভূমিকম্প শুরু করে দিছেন। বাজারের জমি বিক্রি করছেন আমাকে না জানিয়ে, এটা ঠিক করেননি।’

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বিকাশ রঞ্জন তখন বেশ কয়েক বছর আগে সাংসদ রতনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন ও মোবারক হোসেন ওরফে যতনের নামে দুই একর পাঁচ শতাংশ জমি দলিল করে দিয়ে টাকা না পাওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। এখন আর জানানোর মতো সেই সম্পর্ক নেই বলেও জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাংসদের বড় ভাই মোশারফ। তিনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে তাঁর ছেলে তানভীর হোসেনকে নিয়ে বিকাশকে কিলঘুষি মারতে শুরু করেন এবং বিকাশের গলায় থাকা দুই ভরি ওজনের একটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন সাগর।

একপর্যায়ে বিকাশের গলা চেপে ধরে তাঁকে শ্বাস রোধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হলে তিনি কোনোরকমে গলা থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে বাজারের একটি বাসার সামনের অংশে থাকা রেস্তোরাঁয় আশ্রয় নেন। সেখানে গিয়ে মোশারফ ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে ঘেরাও করে রাখেন। বের হলেই তাঁকে শেষ করে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন মোশারফ ও তাঁর ছেলে। এ অবস্থায় বিকাশ ধরমপাশা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকারকে ও সরকারি জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর ধরমপাশা থানার একদল পুলিশ বেলা আড়াইটার দিকে সেখানে গিয়ে তাঁকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত করেন।

তবে মোশারফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘মারধর বা অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ সত্য নয়। আমি জমিজমা নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে তিনিই (বিকাশ) উত্তেজিত হয়ে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এখন যা বলছেন, সেগুলো সাজানো।’

আরও পড়ুন