সাগরে নিম্নচাপ, ৩০ নৌপথে চলাচল বন্ধ

সাগরে গভীর নিম্নচাপের কারণে ভোলা জেলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া, বুড়িগৌরাঙ্গ, ইলিশা নদী ও সাগর মোহনায় জোয়ারের উচ্চতা, বাতাস, বৃষ্টি ও ঢেউয়ের তাণ্ডব বেড়েছে। ২১ অক্টোবর রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে জনজীবন থমকে গেছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথসহ জেলার ৩০টি নৌপথে ফেরি, সি-ট্রাক, লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল বন্ধ আছে।

ভোলার মনপুরা উপজেলার কলাতলীর চরমনপুরা নৌপথের যাত্রীবাহী একটি ট্রলার মেঘনা নদীতে ৬০ জন যাত্রী নিয়ে ঝড়বৃষ্টির কবলে পড়ে। একপর্যায়ে ট্রলারটি বিকল হয়ে যায়। দিক হারিয়ে টানা দুই ঘণ্টা বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। খবর পেয়ে কোস্টগার্ডের সদস্যরা গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পৌনে আটটার দিকে ওই যাত্রীদের উদ্ধার করেছেন। এসব তথ্য দেন মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান টিটু ভূঁইয়া।

ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে শুক্রবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোলার দক্ষিণে সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর ও নদীগুলোয় ১ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আজ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২ কিলোমিটার। সাগরে গভীর নিম্নচাপ চলার কারণে ভোলার নদীতে ঢেউয়ের তাণ্ডব বেড়েছে।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের মৎস্য আড়তদার মো. শাহে আলম ফরাজি বলেন, আজ সকালের জোয়ারের ঢেউ ইউনিয়নের নদীতীরের ক্ষতি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা শরীফুল ইসলাম মুন্সি, নুরুল ইসলাম কেরানি ও মো. নীরব হোসেন চৌকিদারের পাঁচটি মৎস্য আড়তের মাল, একাধিক নৌকা ও গবাদিপশু জোয়ারে পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের চরপদ্মা গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মান্নান চৌকিদার বলেন, মদনপুরের চারদিকে কোনো রিংবাঁধ নেই। খেতে আমন ধান ও সবজি আছে। এই সময় পানি বাড়ার কথা নয়। তারপরও আজ সকালে জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে খেতে দুই থেকে তিন হাত পানি হয়েছে। বাতাসে ধান শুয়ে পড়েছে। সবজিখেত হয়েছে প্লাবিত।

একই ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তাঁদের ইউনিয়নের পুকুরের মাছ জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। ইউপি সদস্য ফারুক দৌলত বলেন, চলতি বছরে টানা জোয়ার ও বৃষ্টিপাতে ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক মাছের ঘের, খেতের ফসল, রাস্তাঘাট, গরুর খামার ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

ভোলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, আজ মেঘনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩ দশমিক ৮ মিটার, যা বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার অতিক্রম করেছে।

ভোলার ইলিশাঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ইমরান খান বলেন, মেঘনার ঢেউয়ের তাণ্ডব বেড়ে যাওয়ায় মালিবাহী ফেরি ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ইলিশা লঞ্চঘাটের পন্টুন জোয়ারে ডুবে গেছে। এ কারণে বন্ধ করা হয়েছে ফেরি ও সি-ট্রাক।

ভোলা নদীবন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, উত্তাল আবহাওয়ার কারণে মেঘনাসহ ভোলার বিভিন্ন নদীর ৩০টি নৌপথে লঞ্চ, ফেরি, সি–ট্রাক ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশ চলমান থাকবে।