সাজা কুলসুমার খাটছেন মিনু: আরেকজন রিমান্ডে

প্রতীকী ছবি

খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি কুলসুমা আক্তার, তাঁর পরিবর্তে মিনু আক্তার নামের এক নারীকে দিয়ে তিন বছর জেল খাটানোর মামলায় আরেকজনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাঁর নাম নুরু কাওয়াল। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি শেষে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক তদন্ত কবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মিনুকে জেল খাটানোর ঘটনায় নুরু কাওয়ালের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুর এলাকা থেকে তাঁকে গতকাল শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হলে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা কবির হোসেন আরও বলেন, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কুলসুম আক্তার ও মর্জিনা আক্তার নামে আরও দুই নারীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের কাল রোববার আদালতে হাজির করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। নিরীহ লোককে টাকার লোভ দেখিয়ে জেলে পাঠানো চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে কুলসুমকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কুলসুম পুলিশকে জানিয়েছেন, মর্জিনা আক্তার নামে মিনুর এক প্রতিবেশীর মাধ্যমে মিনুকে কারাগারে পাঠানো হয়।

‘সাজা কুলসুমার, খাটছেন মিনু’ শিরোনামে গত ২৩ মার্চ প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে বলে উচ্চ আদালতে প্রতিবেদন পাঠান। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তারের পরিবর্তে আরেক আসামি মিনু আক্তার সাজা ভোগ করছেন। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু।

গত ১৬ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান মিনু আক্তার (৩০)। কারামুক্তির ১৩ দিনের মাথায় দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পৃথিবী ছেড়ে গেলেন তিনি। ২৮ জুন দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী ফৌজদারহাট সংযোগ সড়কের আরেফিন নগর এলাকায় দ্রুতগতির একটি ট্রাক মিনুকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়।

ট্রাকচাপায় গুরুতর আহত হন তিনি। খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৯ জুন ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। কোনো পরিচয় না পাওয়ায় এক দিন পরে অজ্ঞাত হিসেবে তাঁর লাশ দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। পরে মিনুর ভাই রুবেল হোসেন ছবি দেখে বোনের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, মুঠোফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই মামলার রায়ে কুলসুমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমা সেজে মিনু কারাগারে আসেন। পরে কুলসুমা উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম খান জানান, কারা রেজিস্টারে থাকা দুজনের ছবির মিল ছিল না। এই বিষয়টি নজরে আসার পর লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়। পরে তিনি মুক্তি পান।

মুক্তির পর মিনু প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মর্জিনা আক্তার নামের পূর্বপরিচিত এক নারী তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে কারাগারে যেতে বলেন। তিনি কুলসুমাকে চিনতেন না। কিন্তু ভয়ে কাউকে কিছু বলেননি।