সাতক্ষীরায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢুকছে পানি, আতঙ্কে মানুষ

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরার গাবুরার নেবুবুনিয়া এলাকায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা ছবি
প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সাতক্ষীরায় ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সোমবার থেকে কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে ঢুকছে। সুন্দরবনসংলগ্ন নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়ছে। এতে উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আটটি টহল ফাঁড়ির সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। আগেই সুন্দরবনের মধ্যে কর্মরত মৌয়াল ও জেলেদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী ও মুন্সিগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, স্বাভাবিকের চেয়ে দেড় থেকে দুই ফুট বেড়ে খোলপেটুয়া, চুনকুড়ি ও কপোতাক্ষ নদের পানি গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া, নাপিতখালি; বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাবাটি ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী এলাকা ও চিংড়িঘেরে ঢুকে পড়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের নেবুবুনিয়া গ্রামের মাজেদ গাজী জানান, কপোতাক্ষ নদের  জোয়ারের পানি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ছাপিয়ে চিংড়িঘেরে ঢুকছে। স্থানীয় লোকজন পানি আটকানোর জন্য মাটি দিয়ে বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহড়তলী গ্রামের শওকাত গাজী বলেন, চুনকুড়ি নদীর জোয়ারের পানি সিংহড়তলী এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। এখন সমস্যা না হলেও রাত ১০টার জোয়ারে লোকালয়ে পানি ঢুকে বাড়িঘর প্লাবিত হতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের আবদুল আলিম জানান, পশ্চিম দুর্গাবাটি এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি বাঁধের ওপর দিয়ে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। স্থানীয় লোকজন মাটি দিয়ে বাঁধ উঁচু করে পানি ঢোকা বন্ধ করেছেন।

গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাউবোর বেড়িবাঁধগুলো চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার বেড়িবাঁধের ৩৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে কপোতাক্ষ নদ, খোলপেটুয়া ও চুনকুড়ি নদীর পানি জোয়ারের চাপে কয়েকটি এলাকায় বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।

আশাশুনি উপজেলায় বাঁধের ১৮টি স্থান ও শ্যামনগর উপজেলার বাঁধের ৩৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকা আশাশুনির প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা এবং শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়া, কৈখালি, ঈশ্বরীপুর, রমজাননগর, কাশিমাড়িসহ সুন্দরবন লাগোয়া মুন্সিগঞ্জ  হরিনগর এলাকায় মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা হয়েছে। আশাশুনি উপজেলায় বাঁধের ১৮টি স্থান ও শ্যামনগর উপজেলারবাঁধের ৩৪টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৪৫টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজন হলে আরও ১ হাজার ৫০০ স্কুল ও কলেজ ভবন আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুজার গিফারি বলেন, শ্যামনগর উপজেলার ১০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। করোনাকালে নিরাপত্তা বজায় রেখে তাদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম এ হাসান জানান, পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বন বিভাগের আটটি টহল ফাঁড়ির সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইয়াস আঘাত করলে এবং অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হলে এলাকাবাসীর উদ্ধারের জন্য নৌযান প্রস্তুত রাখা  হয়েছে।

পাউবোর শ্যামনগর শাখা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, নদীতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বর্তমানে কমপক্ষে দেড় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দমকা বাতাসের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে অবস্থায় কোথাও বাঁধের সমস্যা নেই। তবে নদীগুলোতে পানি সাত-আট ফুট বৃদ্ধি পেলে বাঁধ টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। তাঁরা প্রস্তুত রয়েছেন।

শ্যামনগরের ইউএনও আবুজার গিফারি বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত মানুষজন সরিয়ে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি  হয়নি। সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। হঠাৎ কোনো কিছু হলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।