‘সাদা পাথর’ পরিচ্ছন্নতায় সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সাদা পাথর এলাকায় শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম। আজ বুধবার সকালে সাদা পাথরের নৌঘাট এলাকায়প্রথম আলো

পাথর-জল আর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পর্যটনকেন্দ্র সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত বেশি হয় গ্রীষ্মকালে। গরমের এই মৌসুমে পর্যটক চলাচলের সময় ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র না ফেলার সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতার এক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের পরিষদ (ইউপি) স্থানীয় জনসাধারণকে নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেছে। আজ বুধবার দিনভর এ পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি চলে। সকালবেলা সাদা পাথর এলাকায় যাতায়াতের নৌঘাট ‘১০ নম্বর’ এলাকায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফতাব আলী কালা মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগের পাঠাগারবিষয়ক সম্পাদক ফখরুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠান শেষে ইউএনওর উপস্থিতিতে সাদা পাথর নৌঘাটসহ আশপাশ এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলে বিকেল পর্যন্ত। এতে পর্যটনসেবা–সংশ্লিষ্ট সংগঠনের সদস্যসহ সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সাদা পাথর এলাকায় সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচির সূচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন ইউএনও সুমন আচার্য। আজ বুধবার সকালে
প্রথম আলো

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, এপারে ধলাই নদের উৎসমুখের বিস্তৃত এলাকায় সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড়ের পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে। ২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও আবুল লাইছ পাথর সংরক্ষণ করেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলাসোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

সীমান্তের ওপারে পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলের অবগাহনে বছরজুড়ে সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত থাকে। সড়কপথে ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামের একটি বাস সার্ভিস চালুর পর প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এর মধ্যে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকসংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এখানে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। গ্রীষ্মকালে এ সংখ্যা হয় দ্বিগুণ।

পশ্চিম ইসলামপুর ইউপি সূত্র জানায়, সাদা পাথর হিসেবে পর্যটক আকর্ষণের স্থানটিতে ১৯৯০ সালে পাহাড়ি ঢলে প্রথম পাথর জমা হয়। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ না করায় তখন ব্যাপক লুটপাট হয়েছিল। দুই যুগের বেশি সময় পর ২০১৭ সালের বর্ষাকালে আবার পাথর জমা হলে এবার স্থানীয় মানুষ পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে নামেন। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় গোটা এলাকা পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। বিগত তিন বছরের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে জমা হওয়া পাথরের স্তূপ আরও বিস্তৃত হয়েছে।

জল-পাথরের টানে দেশ-বিদেশের মানুষ ছুটে আসেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদা পাথর’ এলাকায়
ফাইল ছবি

গ্রীষ্মকালে জল-পাথরে গোসল করতে গিয়ে পর্যটক সমাগম বেশি হয় এবং এ সময় পর্যটকদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ফেলে যাওয়ার ফলে সাদা পাথর এলাকায় ময়লা-আবর্জনা জমে। বিগত দিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবার মৌসুমের শুরুতেই পরিচ্ছন্নতার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, কর্মসূচিটি গত বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তখন করা সম্ভব হয়নি। এবার বর্ষাকাল থেকে গ্রীষ্মকালে সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকেরা আসছেন। গরমে আরও বেশি আনাগোনা হবে। এ জন্য পুরো এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখতে টানা তিন দিন সাদা পাথর এলাকায় এ কর্মসূচি শেষে আরও চার দিন আশপাশ দর্শনীয় এলাকায় এই অভিযান হবে। স্বেচ্ছাসেবী জনসাধারণ এই কর্মসূচিতে একাত্ম হয়েছেন।

সাদা পাথর পরিচ্ছন্ন রাখার মধ্য দিয়ে এলাকার পরিবেশও সুন্দর হবে জানিয়ে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, গরমকালে সাদা পাথর এলাকায় গোসল করতে নেমে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে সতর্ক থাকার প্রচারণাও স্থানীয় জনসাধারণের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।