সান্তাহারের পরিবর্তে নওগাঁ সদরে বাফার গুদাম স্থাপনের দাবি

সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে নওগাঁ জেলায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি বাফার গুদাম স্থাপনের প্রকল্প পাস হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে নির্মাণকাজ শুরু হতে যাওয়া এই গুদামটিই স্থাপনের জন্য নওগাঁর কোনো স্থান নির্বাচন না করে বগুড়া সান্তাহার পৌর শহরসংলগ্ন খাট্টাসাহাপুরকে নির্বাচন করেছে বিসিআইসি।

যৌক্তিক স্থানে নওগাঁ বাফার গুদাম স্থাপনের দাবিতে বিএফএ-নওগাঁ জেলা শাখার সংবাদ সম্মেলন। আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়ে বিএফএ নওগাঁ শাখার কার্যালয়েপ্রথম আলো

বগুড়া জেলার সান্তাহার পৌর শহরসংলগ্ন খাট্টাসাহাপুর এলাকার পরিবর্তে নওগাঁর সদর উপজেলার কুমুরিয়া অথবা হাপানিয়া এলাকায় বাফার গুদাম স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) নওগাঁ জেলা শাখা। আজ সোমবার দুপুরে নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড় এলাকায় সংগঠনটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএফএ নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁ জেলায় বাৎসরিক রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় দেড় কোটি মেট্রিক টন। অথচ এখনো মজুত ও বিতরণে এ জেলায় কোনো গুদাম নির্মাণ হয়নি। জেলায় সারের আপৎকালীন মজুতের বাফার গুদাম স্থাপনের দাবি তাঁদের দীর্ঘদিনের। এ দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু নওগাঁর কৃষক, সার পরিবেশক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসন মত দিয়েছিল, নওগাঁ জেলার মধ্যবর্তী স্থান কুমুরিয়া অথবা হাপানিয়ায় বাফার গুদাম স্থাপন করা হোক। অথচ স্থানীয় ব্যক্তিদের এই মতামত উপেক্ষা করে বগুড়ার সান্তাহার শহরসংলগ্ন খাট্টাসাহাপুর এলাকায় বাফার গুদামের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন (বিসিআইসি)।

রেজাউল করিম বলেন, সান্তাহারের খাট্টাসাহার একটি আবাসিক এলাকা। এখানে বাফার গুদামের জন্য ৭ একর জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় হবে ৩২ কোটি টাকা। অথচ নওগাঁর স্থানীয় মহল থেকে প্রস্তাবিত স্থান কুমুরিয়া কিংবা হাপানিয়ায় জমি অধিগ্রহণে সরকারের খরচ হবে মাত্র ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ সরকারের প্রায় ২০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ উপেক্ষা করে কোন স্বার্থে বিসিআইসি সান্তাহারে বাফার গুদাম স্থাপন করছে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।

সান্তাহারের খাট্টাসাহার বাফার গুদামের জন্য ৭ একর জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় হবে ৩২ কোটি টাকা। অথচ নওগাঁর স্থানীয় মহল থেকে প্রস্তাবিত স্থান কুমুরিয়া কিংবা হাপানিয়ায় জমি অধিগ্রহণে সরকারের খরচ হবে মাত্র ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আবাসিক এলাকা হওয়ায় খাট্টাসাহাপুরে গুদাম নির্মাণ করা হলে সরকারি স্থাপনা নির্মাণের শর্ত ভঙ্গ হবে। তা ছাড়া খাট্টাসাহাপুরের পাশেই বগুড়া জেলার সান্তাহার। সান্তাহারে আগে থেকেই বিসিআইসির একটি বাফার গুদাম আছে। সেখানে সার নিতে গিয়ে নওগাঁর ডিলারদের চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। সঠিক সময়ে কৃষকদের মধ্যে সার সরবরাহ কঠিন হয়ে পড়ে। খাট্টাসাহাপুরে গুদাম নির্মাণ হলে সার আনা-নেওয়া, পরিবহন চলাচল ও পরিবহন বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে ডিলারদের চরম হয়রানি ও বিড়ম্বনার শিকার হতে হবে।

বিএফএ নওগাঁ জেলা শাখার সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাস আগে খাট্টাসাহাপুর এলাকায় বাফার গুদাম স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণ ও জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমরা জানতে পারি। জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে চিঠি আসে। এরপর থেকেই শিল্পমন্ত্রী, বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্থান পরিবর্তনের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি।’

স্থানীয় সার ব্যবসায়ী ও কৃষকদের দাবির বিষয়টি বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই দাবি বিবেচনা করে স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিসিআইসি কিংবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কিছু করার নেই।
হারুন-অর-রশিদ, জেলা প্রশাসক, নওগাঁ

তিনি বলেন, খাট্টাসাহাপুরের পরিবর্তে কুমুরিয়া মৌজায় বাফার গুদাম নির্মাণের পক্ষে ইতিমধ্যেই মতামত দিয়েছেন নওগাঁ-১ আসনের সাংসদ ও খাদ্যমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ ছাড়া নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল, নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট) আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সাংসদ সলিম উদ্দিন তরফদারও এর পক্ষেই মতামত দিয়েছেন।

এ সময় যৌক্তিক স্থানে বাফার গুদাম স্থাপন না করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন বিএফএ নেতারা। এদিকে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে নওগাঁ জেলায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি বাফার গুদাম স্থাপনের প্রকল্প পাস হয় ২০১৭ সালে। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্মাণকাজ শুরু হতে যাওয়া এই গুদাম স্থাপনের জন্য নওগাঁর কোনো স্থান নির্বাচন না করে বগুড়া সান্তাহার পৌর শহরসংলগ্ন খাট্টাসাহাপুরকে নির্বাচন করেছে বিসিআইসি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশিদ বলেন, স্থানীয় সার ব্যবসায়ী ও কৃষকদের দাবির বিষয়টি বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এই দাবি বিবেচনা করে স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিসিআইসি কিংবা শিল্প মন্ত্রণালয়ের। এখানে স্থানীয় প্রশাসনের তেমন কিছু করার নেই।