সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো ইনকিউবেটরে ৪ উটপাখির ছানা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো ইনকিউবেটরে ৪টি উটপাখির ছানা হয়েছে
সাদিক মৃধা

বিগত বছরগুলোয় গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে উটপাখির ছানা পেতে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হতো। এতে ডিম থেকে ছানা পাওয়ার হার কম ছিল। এ বছর ইনকিউবেটরে পাওয়া গেছে ব্যাপক সফলতা। ৬ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত চারটি উটপাখির ছানা পাওয়া গেছে। আরও পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ।

সাফারি পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ ইন্সপেক্টর আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুটি উটপাখি পালাক্রমে বেশ কিছু দিন ধরে অনেকগুলো ডিমে তা দিচ্ছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু ডিম আশপাশে ছড়িয়ে ছিল। সেগুলো এনে ইনকিউবেটর মেশিনে দেওয়া হয়। প্রাকৃতিকভাবে উটপাখির ছানার জন্মহার খুবই কম। ইতিমধ্যে ময়ূরের ডিম ফুটানোর জন্য পার্কে ইনকিউবেটর মেশিন ছিল। সেই মেশিনের মাধ্যমে উটপাখির ডিম ফোটানোর চেষ্টা করা হয়। পাখিগুলো প্রকৃতিতে যেভাবে ডিমে তা দেয়, ঠিক সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে ইনকিউবেটর মেশিনে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গত কয়েক বছর প্রকৃতিতেই বেশ কয়েকটি বাচ্চা ফুটেছিল। কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বেশির ভাগই মারা গেছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, ইনকিউবেটরে ডিমগুলো রেখে প্রতিদিন নিয়ম করে তিনবার ঘোরাতে হয়। ৩৮ দিন রাখতে হয়। এরপর হ্যাচারে নিয়ে চার থেকে পাঁচ দিন রাখা হয়। সেখানেই ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা বের হয়। মূলত, উটপাখির বাচ্চা ফুটাতে ৪২ দিন সময় লাগে। তিনি বলেন, ৬ জানুয়ারি দুটি, ৭ জানুয়ারি একটি ও ৮ জানুয়ারি একটি ছানা পাওয়া গেছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, সমতলে বসবাস করা আকারে সবচেয়ে বড় হলো উটপাখি। উটপাখি আবদ্ধ অবস্থায় ৬০ বছর বেঁচে থাকে। অন্যদিকে, প্রকৃতিতে ৪০ থেকে ৪৫ বছর বাঁচে। এদের ওজন ৬৩ থেকে ১৪৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে গড় হিসাবে পুরুষের ওজন ১১৫ কেজি ও নারীর ওজন ১০০ কেজি হয়। উটপাখি লম্বা পায়ে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে দৌড়াতে পারে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, একেকটি ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়ে আসতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ৬ জানুয়ারি দুপুরের দিকে একটি ডিম ফোটে। এরপর সেটি থেকে ধীরে ধীরে ছানাটি বের হয়ে আসতে রাত ১১টার মতো বেজে যায়। এভাবেই ছয় দিন ধরে চারটি ছানা পাওয়া গেছে। মেশিনের ভেতরে আরও একটি ডিমের নড়াচড়া দেখা গেছে। এতে আরও একটি ছানা পাওয়ার আশা আছে। এ ছাড়া দুটি উটপাখি ডিম নিয়ে বসে আছে। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে সেখান থেকেও দু-একটি ছানা পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো ইনকিউবেটরে উটপাখির ছানা উৎপাদনের ঘটনাটি সবাইকে আশান্বিত করছে।