সাবমেরিন কেবলে বিদ্যুৎ গেল পদ্মার চরে, জ্বলল আলো
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে পদ্মার চরের সাতটি গ্রামে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রোববার দুপুরে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাংসদ আ কা ম সরওয়ার জাহান ভাগজোত চর এলাকায় বাতি জ্বালিয়ে এর উদ্বোধন করেন।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে এসব গ্রাম ভুতুড়ে জনপদে পরিণত হতো। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় বাজারগুলোও জনশূন্য হয়ে পড়ত। বিদ্যুতের আলো এই অঞ্চলের মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। বিদ্যুতের আলো পেয়ে তাদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামগুলো শত বছরের পুরোনো চরে অবস্থিত। পদ্মা নদী এসব চরকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে। এর এক পাশে ভারতীয় সীমানা। নৌযান ছাড়া চরে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এসব চরে বিদ্যুতের আলো জ্বলবে, এটা কল্পনার বাইরে ছিল।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা যায়, রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়ন দুটি ভারতের সীমান্তবর্তী। পদ্মা নদী এ দুটি ইউনিয়নকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে। ইউনিয়ন দুটির অন্তত ৩৮টি গ্রাম পদ্মার চরে। জেলা শহর থেকে অন্তত ৫০ কিলোমিটার দূরে এসব গ্রাম অবস্থিত। গ্রামগুলোয় প্রায় ৫০ হাজার মানুষের বাস। চরগুলোয় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। এসব চরে বিদ্যুতের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন সাংসদ সরওয়ার জাহান। কিন্তু পদ্মা পেরিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পরে পদ্মার তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের সাহায্যে বিদ্যুৎ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে এ কাজ শুরু হয়। সমতল থেকে চরে যেতে পদ্মার প্রায় আড়াই কিলোমিটার অংশ পড়েছে। সেখানে সাবমেরিন কেবল ব্যবহার করা হয়েছে। চিলমারীতে বসানো হয়েছে বিদ্যুতের উপকেন্দ্র। দুটি ইউনিয়নে ২৪২ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে চরের গ্রামগুলোয় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে দুটি ইউনিয়নে সাড়ে ৮ হাজার মিটার বসানো হচ্ছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর, সোনাতলা, লোকনাথপুর, কান্দিরপাড়া, ইনসাফনগর, মহাম্মদপুর ও ঠোটারপাড়া গ্রামে আজ বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সোহরাব আলী বিশ্বাস বলেন, দুর্গম চর হওয়ায় বিদ্যুতের লাইন স্থাপন ও মালামাল পরিবহন খুব কঠিন ছিল। পদ্মা নদীর মাঝ দিয়ে সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে লাইন নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৭টি গ্রামে ২২১টি পরিবারের বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে। আগামী মার্চের মধ্যে দুই ইউনিয়নের সাড়ে ৮ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসবে।
বিদ্যুতের সংযোগ চালু উপলক্ষে দুপুরে ভাগজোত চর এলাকায় অনুষ্ঠান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ সরওয়ার। রামকৃষ্ণপুর ইউপির চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল সভায় সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক সোহরাব আলী বিশ্বাস, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সাংসদ সরওয়ার বলেন, ‘নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মাত্র দুই বছরের মাথায় চরে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিতে পেরেছি। চরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ ও পদ্মা নদীর ভাগজোত পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।’