সাবেক ছাত্রলীগ নেতার কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় মামলা

কাটা হাত নিয়ে রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আতাউর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও কলেজশিক্ষক আতাউর রহমানের ওপর হামলার ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আতাউরের বাবা আলতাফ হোসেন সরকার বাদী হয়ে রাজারহাট থানায় এ মামলা করেন। হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত মেহেদী হাসান ওরফে বাঁধনকে প্রধান করে অজ্ঞাত আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাজু সরকার মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার ১১ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

গত মঙ্গলবার দুপুরে জেলার রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের পালপাড়া এলাকায় ওত পেতে থাকা কয়েকজন সন্ত্রাসীর হামলার শিকার হন কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান। এতে তাঁর ডান হাতের কবজি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ছাড়া তাঁর অপর হাত ও দুই পায়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। আতাউর ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের ছেলে।

বৃহস্পতিবার সকালে কাঁঠালবাড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। মেহেদী হাসান সম্পর্কে জানাতে চাইলে সহজে কেউ মুখ খুলতে রাজি না। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় মানুষ বলেন, নাম-পরিচয় জানতে পারলে তারা রাতের আঁধারে এসে কোপাবে। ওদের ভয়ে সন্ধ্যার আগেই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি চলে যান বাজারের ব্যবসায়ীরা। প্রকাশ্যেই ওরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। বাজারের পাশে পুলিশের বিট অফিস আছে, তারাও কিছু বলে না।

কাঁঠালবাড়ী এলাকায় আতাউরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই আতঙ্কগ্রস্ত। তাঁরা ভেবে পাচ্ছেন না কী করবেন। আতাউরের বাবা আলতাফ হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন। আত্মীয়স্বজন তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

আলতাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার সন্তানের ওপর বর্বর হামলার বিচার চাই। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও উপযুক্ত বিচার করতে হবে।’ তিনি বলেন, সন্ত্রাসী মেহেদী হাসান বাঁধনের নামে কুড়িগ্রাম সদর থানায় ৯টি সন্ত্রাসী মামলা আছে। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বারবার জামিন নিয়ে আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে কি সন্ত্রাসীদের দিয়ে কাঁঠালবাড়ী চলবে? একের পর এক ঘটনা ঘটালেও তার বিচার হয় না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আতাউরের এক আত্মীয় বলেন, ‘আতাউরকে মারার পর উল্টো হুমকি দিচ্ছে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কথা বললে বা সাক্ষী দিলে খবর আছে। সবাই ভয়ে অস্থির।’

বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাব–১৩–এর একটি দল কাঁঠালবাড়ী এলাকায় টহল দেন ও আতাউরদের বাড়ি পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁরা আলতাফ হোসেনসহ পরিবারের সদস্য এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

কুড়িগ্রামে কলেজশিক্ষকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার মানববন্ধন হয়
প্রথম আলো

এদিকে আতাউরের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতা–কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন কলেজের অধ্যক্ষ খাজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ, সহকারী অধ্যাপক রামগোপাল সরকার, প্রভাষক হারুন অর রশীদ, প্রভাষক সুরাইয়া আকতার, প্রভাষক মামুন সেলিম প্রমুখ। বক্তারা কলেজশিক্ষক আতাউরের ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও অবিলম্বে তাঁদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতা–কর্মীরা ঘোষপাড়া দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে করেন। এতে বক্তব্য দেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনিছুর চাঁদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুজ্জামান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিনহাজুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান, মজিদা কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি মিন্টু মিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আতাউর রহমানের ওপর যে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে, তা অত্যন্ত ঘৃণীত। আতাউর সুস্থ হয়ে উঠলেও সারা জীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে। এ ঘটনার জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান বক্তারা।

আরও পড়ুন