সাভারে হেলে পড়েছে ছয়তলা ভবন, সতর্কতা

সাভারের ওয়াপদা রোডের ডান পাশের ভবনটি বাঁপাশের ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেল তোলা ছবি।
প্রথম আলো

ঢাকার সাভারে পৌর এলাকার ওয়াপদা রোডে আজ মঙ্গলবার একটি ছয়তলা ভবন পাশের একটি ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভবনটি সিলগালা করে দিয়েছে। এর আগে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভবনের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়।

ওয়াপদা রোডের ৩/২ নম্বর ‘প্রিয়াংকা ম্যানশন’ নামের বাড়িটির মালিক তাজুল ইসলামের স্ত্রী মাজেদা আক্তার। তিনি পরিবার নিয়ে ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন। ভবনের নিচতলার ইকবাল জেনারেল স্টোরের কর্মচারীরা বলেন, মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দোকান খোলার সময় তাঁরা দোকানের সামনে ফাটল দেখতে পান। ভবন দেবে যাওয়ায় তাঁরা শাটার খুলতে পারছিলেন না। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পৌর কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়।

প্রিয়াংকা ম্যানশন নামের ভবনটি উত্তর দিকে অপর একটি ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। পশ্চিম দিকে বাড়িটির সামনের অংশে মেঝেসহ ভবনের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে।


এ বিষয়ে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফুল ইমাম বলেন, ভিতে ত্রুটি থাকায় ভবনটি এক দিকে হেলে পড়েছে এবং সামনের অংশ দেবে যাচ্ছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।  
মঙ্গলবার দেখা যায়, প্রিয়াংকা ম্যানশন নামের ভবনটি উত্তর দিকে অপর একটি ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে পড়েছে। পশ্চিম দিকে বাড়িটির সামনের অংশে মেঝেসহ ভবনের আশপাশে বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। পূর্ব দিকে হেলে পড়া ভবনসংলগ্ন আরও একটি নয়তলা ভবন রয়েছে। সামনের অংশ দেবে যাওয়ায় ওই নয়তলা ভবন থেকে হেলে পড়া ভবনটির ওপরের অংশ সরে গেছে।

সাভার পৌরসভা থেকে জানানো হয়, হেলে পড়া ভবনটিসহ পাশের ছয়তলা ও নয়তলা ভবন বেশ পুরোনো। অনুমোদিত নকশা থাকার দাবি করলেও তিন ভবন মালিকের কেউই পৌরসভার অনুমোদিত নকশা দেখাতে পারেননি। এসব বাড়ির কোনো নথিপত্র পৌরসভায় খুঁজে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, টিনের ঘর থেকে কয়েক বছর আগে পাকা ভবন গড়ে তোলা হয়। এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকৌশলীর পরামর্শ নেওয়া হয়নি। হেলে পড়া ভবনের পাশে নয়তলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র দেড় শতাংশ জমির ওপর।
জানতে চাইলে হেলে পড়া ভবনের মালিক মাজেদা আক্তার বলেন, তাঁদের ভবনটির অনুমোদিত নকশা রয়েছে। সম্প্রতি তাঁর স্বামী মারা যাওয়ায় তাঁরা তা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে তাঁদের ভবনটি মোটেও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। একটি মহল গুজব ছড়িয়ে তাঁদের হয়রানি করছে।

নয়তলা ভবনের মালিক আনোয়ার হোসেন তাঁর ভবনের অনুমোদিত নকশা থাকার দাবি করলেও দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

সাভার পৌরসভার মেয়র আবদুল গনি বলেন, হেলে পড়া ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভবন মালিককে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দিয়ে সক্ষমতা যাচাই করতে বলা হয়েছে। সক্ষমতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগ পর্যন্ত ভবনটি সিলগালা অবস্থায় থাকবে। তিনি আরও বলেন, পাশের ছয়তলা ও নয়তলা ভবনের মালিককে অনুমোদিত নকশা জমা দেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হবে। অনুমোদিত নকশা দেখাতে না পারলে ওই দুই ভবন মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপা বলেন, পৌরসভার পক্ষ থেকে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ওয়াপদা রোডে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।