সামনের দিনগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঢাবি ছাত্র সৌরভ

সৌরভ দাস পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে।
ছবি: সংগৃহীত

জন্মের পর থেকেই দেখেছেন অভাব। দরিদ্র বাবার অনটনের সংসারে তাই বেশি দিন থাকা হয়নি সৌরভের। দুরন্তপনার শৈশব কেটেছে নানাবাড়িতে। সেখানে থেকেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর পরিবার ও আশপাশের মানুষের জন্য গৌরব বয়ে নিয়ে আসেন সরাইলের ছেলে সৌরভ। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সৌরভ দাসের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কানিউচ্ছ গ্রামে। বর্তমানে তিনি পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষে। থাকেন জগন্নাথ হলে। সৌরভের বাবা বিষ্ণু দাস ও মা চম্পা রানী দাস। আরও তিন সন্তানকে নিয়ে মা গ্রামেই থাকেন। আর বাবা বিষ্ণু দাস থাকেন চট্টগ্রামে। সেখানে ফেরি করে স্টিলের হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন তিনি।

সৌরভ বলছিলেন, অনটনের সংসারে এক-আধবেলা খেয়েই তাঁকে পড়াশোনা করিয়েছেন মা-বাবা। জীবনের লড়াইয়ে ক্লান্ত মা-বাবাকে এবার অবসর দিতে চান তিনি। তবে শহরের বাস্তবতায় এসে তিনি বুঝতে পেরেছেন, সে পথ এখনো অনেক দূর। পরিচিত কয়েকজনের সহায়তায় ভর্তির খরচ মিটিয়ে কোনোভাবে চলছেন তিনি। প্রথম বর্ষের শুরুতেই টিউশনি পাওয়া দুষ্কর, পরিবার থেকে সহায়তা পাওয়ারও আশা নেই। এ কারণে আগামীর দিনগুলোয় কীভাবে পড়াশোনা আর খাবারের খরচ চালাবেন, তা ভেবেই দিশাহীন।

সৌরভ প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে থাকি এখন। করোনার কারণে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। টাকা নেই, তাই বই কিনতে পারিনি এখনো। একটা মুঠোফোন আছে, কিন্তু সেটাতে জুম অ্যাপ সাপোর্ট করে না বলে ক্লাসও করতে পারি না ঠিকমতো। বই কেনা, পড়াশোনার খরচ আর খাবারের টাকা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। বাবা ইতিমধ্যেই অনেক ঋণ করেছেন, তাঁকে আর কষ্ট দিতে চাই না।’

সৌরভ বলেন, ‘করোনার সময় বাবা বলছিলেন, আর পড়াশোনার খরচ দিতে পারবেন না। তারপরও বাবা ঋণ করে টাকা জোগাড় করেছেন। দেখতাম, বাবা খুব কষ্ট করতেন। আমার পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে বাবা প্রায়ই এক বেলার খাবার খেতেন না। এটা আমাকে ভাবাত সবচেয়ে বেশি। তখনই মনে হতো আমাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে। ফোন করলে প্রায় ধরতে পেতাম বাবা কণ্ঠটা বেশ শুকনো। জিজ্ঞাসা করলে বলতে চাইতেন না। তবু আমি জিজ্ঞাসা করতাম। তখন বাবা বলতেন, তিনি দুপুরে খাননি। তখন ইচ্ছা করত ভালো কিছু হয়ে বাবাকে এই কাজ আর করতে দেব না। আমাকে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেই হবে। সেটা তো হলাম; কিন্তু এখন দিন পার হচ্ছে নতুন দুশ্চিন্তায়।’