সামাজিক দূরত্ব উপেক্ষিত, গাদাগাদি করে সারিতে ভোটারেরা

কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ভালো থাকলেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়ান ভোটারেরা। অনেকের মুখেও ছিল না মাস্ক। শনিবার সকালে গোলাপগঞ্জ পৌর শহরের ঘোগারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রেআনিস মাহমুদ

ভোটারদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, বরং গা ঘেঁষাঘেঁষি করে একজন যেন আরেকজনের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, দায়িত্বরত পুলিশ থেকে শুরু করে পোলিং কর্মকর্তাসহ অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। তাঁরা ভোটকক্ষেও বসেছেন কোনো দূরত্ব বজায় না রেখে।

স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকার এ চিত্র সিলেটের গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে। অথচ সব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা আছে।

সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। তা চলবে বেলা চারটা পর্যন্ত। নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্যাডের কালি শেষ হওয়ায় ভোগান্তি এবং ধীরগতিতে ভোট গ্রহণসহ দু-একটি বিচ্ছিন্ন অভিযোগ ছাড়া প্রার্থীরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

সকাল থেকে নয়টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র কুয়াশা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোয় নারী ও পুরুষ ভোটাররা ভিড় জমিয়েছেন। গাদাগাদি হলেও সারিবদ্ধভাবে ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কেন্দ্রে। তবে অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি।

রনকেলী-২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম বলেন, নয়টি কেন্দ্রের মধ্যে তাঁর কেন্দ্রেই সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটার। ২ হাজার ৯৫৫ জন। ভোটকক্ষ আটটি। সকাল সোয়া নয়টা পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে ১৬০টি ভোট পড়ে। জায়গা কম অথচ ভোটার বেশি, তাই সব সময় স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না।

বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মুদ্রিত ‘ভোটকক্ষে প্রবেশের পূর্বে ও পরে করণীয়’ শীর্ষক কয়েকটি ব্যানার সাঁটানো। এতে ভোটার এবং ভোট গ্রহণে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-সদস্যদের জন্য তিনটি করে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া। এর মধ্যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মাস্ক পরে ও পরস্পর থেকে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে লাইনে দাঁড়ানোসহ স্বাস্থ্যবিধির নানা নির্দেশনা দেওয়া।

সরকারি এমসি একাডেমি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত তাঁর কেন্দ্রে ১০ শতাংশ ভোট পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ে। অসচেতন অনেক ভোটার থাকার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এদিকে নির্বাচনে ভোট গ্রহণের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রার্থীদের এজেন্ট ও ভোটাররা। সরকারি এমসি একাডেমি কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে সকাল পৌনে নয়টার দিকে নৌকা, ধানের শীষ, মুঠোফোন ও জগের এজেন্ট যথাক্রমে জীবন মালাকার, সিদ্দিকুর রহমান, জহিরুল ইসলাম ও সেলিম উদ্দিন বলেন, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হচ্ছে। ওই কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা ষাটোর্ধ্ব জুনই বেগম ও নুরুনেসা বলেন, মেয়র যে–ই হোক, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন।

পৌরসভায় মেয়র পদে মোট চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। আওয়ামী লীগ–মনোনীত মোহাম্মদ রুহেল আহমদ (নৌকা) ও বিএনপি–মনোনীত গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী (ধানের শীষ)। এ ছাড়া স্বতন্ত্র হিসেবে আওয়ামী লীগের দুজন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ (মুঠোফোন) এবং পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি (নির্বাচনের আগে বহিষ্কৃত) ও বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম (জগ)।

২০০২ সালে প্রথম নির্বাচনে মেয়র হন জাকারিয়া আহমদ। ২০০৮ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনেও তিনি জয়ী হন। ২০১৫ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী বিজয়ী হন। ২০১৮ সালের ৩১ মে তিনি মারা গেলে পদ শূন্য ঘোষণা হয়। একই বছরের ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আমিনুল ইসলাম মেয়র হন।