সামিউলের স্বপ্ন কি অধরাই থেকে যাবে?

সামিউল ইসলাম

সামিউল ইসলামের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে তাঁর বাবাকে অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়েছে। ভোরে ঘুম থেকে উঠে সামিউলকেও মাঝেমধ্যে ছুটতে হয়েছে বাবার সঙ্গে খেতে, মাঠে।

দারিদ্র্যের সঙ্গে সব সময় লড়াই করে সামিউলকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। তাঁর সেই কষ্ট আর শ্রমের বিনিময়ে আজ এসে ধরা দিয়েছে সাফল্য। এবার এমবিবিএস কোর্সে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাঁর এ সাফল্যের খবরে খুশি পাড়াপ্রতিবেশীরা। কিন্তু মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, থাকা–খাওয়া, ভর্তি ও বই কেনার টাকা কোথায় পাবেন, সেটা ভেবে খুশির বদলে কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ তাঁর।

সামিউল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের গাংগইট গ্রামের সানোয়ার হোসেনের ছেলে। তাঁর বাবা পেশায় দিনমজুর। দিনমজুরির পাশাপাশি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদও করেন তিনি। মা নাদিরা বিবি পেশায় গৃহিণী। সামিউলের একমাত্র বোন নুরানী আকতার ধারিয়া-গাংগইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।

সামিউলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর বাবার সহায়–সম্বল বলতে মাথা গোঁজার মতো কাঁচা একটা ঘর আছে। এক ঘরেই মা–বাবার সঙ্গে দুই ভাইবোনকে থাকতে হয়। সংসার চলে বাবার দিনমজুরি আর বর্গা চাষের আয়ে। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। ধারিয়া-গাংগইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর তিনি ভর্তি হন কিচক দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে জিপিএ–৫ পেয়েছেন। এরপর ভর্তি হন বগুড়ার সরকারি শাহ সুলতান কলেজে। সেখানে মেসে থেকে তিনি টিউশনি করে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে এইচএসসিতেও বিজ্ঞান বিভাগে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

সামিউল বলেন, বাড়ি থেকে স্কুল খানিকটা দূরে। সাইকেল কেনার সামর্থ্য না থাকায় প্রথম দিকে হেঁটেই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতেন। স্কুল ছুটির দিনে বাবার সঙ্গে খেতে কাজ করতে যেতেন। তিনি আরও বলেন, ‘শৈশব থেকে নিজেকে একজন “মানবিক ডাক্তার” হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু দিনমজুর বাবার অভাবের সংসার। মেডিকেল কলেজে পড়ার খরচ কীভাবে আসবে, সেই চিন্তায় মাঝেমধ্যে হতাশ হতাম, মন খারাপ হতো। তবে আশা ছাড়িনি। বুকের ভেতরে স্বপ্ন পুষে রেখে দরিদ্রের সঙ্গে সব সময় লড়াই করে পড়াশোনা করেছি।’ ‘মানবিক চিকিৎসক’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। ভর্তির সুযোগও পেয়েছি। এই সাফল্যে পাড়াপ্রতিবেশীরা খুব খুশি। কিন্তু মেডিকেল কলেজে ভর্তির এত টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে, থাকা–খাওয়ার খরচ কীভাবে জোগাব, বইপুস্তক–পোশাক কেনার অর্থ কোথায় পাব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। মেডিকেলে পড়ানোর খরচ জোগানো নিয়ে মা-বাবাও দুশ্চিন্তায় আছেন।

সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিঘা দুয়েক জমিন বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করিচ্চি। ঠিকমতো সংসার চলে না। অন্যের বাড়িত দিনমজুরি দিতে হয়। দিনে ৩০০-৪০০ টেকা কামাই হয়। সেডা দিয়ে কোনো রকমে এত দিন ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাচি। অভাব কষ্টে পড়াশোনা করেছে ছেলেটা। ম্যালা দিনের শখ ছিল ডাক্তার হবি। মেডিকেলত চান্স পাওয়ায় গেরামজুড়ে সগলি খুশি। কিন্তু ছেলেডাক ডাক্তারি পড়াবার খরচ ক্যাংকা করে জোগামু সেই চিন্তা করিচ্চি।’

গাংগইট গ্রামের প্রতিবেশী আবদুল আলিম বলেন, ‘মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে দিনমজুর বাবার ঘর আলোকিত করেছে সামিউল। ছেলেটা এত দিন অন্যের বইপুস্তক ধার করে পড়াশোনা করেছে। ভালো কোনো পোশাক জোটেনি। কষ্ট করে পড়াশোনা করেও এই সাফল্যে সবাই খুশি। কিন্তু মেডিকেলে পড়ার খরচ জোগানে নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় আছেন মা–বাবা।’