ঈদে মাংস খাবেন বলে সারা বছর সঞ্চয় করেন তাঁরা

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হামিদপুর এলাকার মাংস সমিতির সদস্যরা মিলেমিশে মাংস কাটাকাটি করছেন। বুধবার সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে ‘মাংস সমিতি’। উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় এ ধরনের সমিতি গড়ে উঠেছে। সারা বছর মাসে মাসে সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি তাঁরা ঈদের আগে পান বাড়তি আনন্দ।

সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় ১০ থেকে ১২ বছর আগে হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের সমিতি চালু হয়। পরে প্রতিবছর সমিতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ বছর সমিতির সংখ্যা হাজারখানেক। এ ধরনের সমিতিতে সাধারণত সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে ৬০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা জমা দেন। পরে জমা করা টাকায় ঈদের দু-এক দিন আগে গরু বা ছাগল কিনে এনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন তাঁরা। শুরুতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকেরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যেও এ ধরনের সমিতি করার আগ্রহ বেড়েছে।

উপজেলার কাঁকড়াজান ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামের রাবেয়া বেগমের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি মাংস সমিতি। সমিতিতে ৩৩ জন নারী সদস্য আছেন। তাঁরা প্রতি মাসে ৩০০ টাকা করে জমা রাখেন। বছর শেষে তাঁদের সমিতিতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো জমা হয়। এবার তাঁরা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়ে একটা গরু কিনেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ওই গরু জবাই করে তাঁরা মাংস ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।

রাবেয়া বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে নানা কিছু কেনাকাটায় টাকা শেষ হয়ে যায়। এ সময় তাঁদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নারীরা সমিতি করার কারণে ঈদের আগে পরিবারের পুরুষদের অনেক চাপ কমেছে। এতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঈদের আনন্দ বেড়ে যায়।

হামিদপুর চৌরাস্তা গ্রামের মাংস সমিতির সভাপতি ইসমাইল হোসেন বলেন, তাঁদের সমিতিতে সদস্যসংখ্যা ৫৩ জন। প্রত্যেকে মাসিক ২০০ টাকা করে জমা দেন। বছর শেষে সমিতিতে জমা হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। এই টাকা দিয়ে গরু কিনে সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। ইসমাইল আরও বলেন, তাঁদের গ্রামে এমন অন্তত ১০টি সমিতি আছে।

সখীপুরে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ঈদের আগেই ‘ঈদ আনন্দ’ দিচ্ছে ‘মাংস সমিতি’। বুধবার উপজেলার হামিদপুর এলাকার মাংস সমিতির সদস্যরা মিলেমিশে মাংস কাটাকাটি করেন এবং সবশেষে মাংস ভাগাভাগি করে নেন

সখীপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সানবান্ধা গ্রামের অটোরিকশাচালক নিজাম উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে নতুন জামা-কাপড় কেনাসহ অনেক খরচ হয়। হাত খালি হয়ে যায়। সমিতি করলে অনায়াসে ৭-৮ কেজি মাংস পাওয়া যায়। আর এ মাংস দিয়ে ঈদের দিন নিজেরাও খাওয়া যায়, অতিথিও আপ্যায়ন করা যায়।

মাংস সমিতি এখন স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জানালেন সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবুল আক্তার। তিনি বলেন, সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে তাঁরা বাড়তি আনন্দ পেয়ে থাকেন। এতে সংসারের চাপও অনেক কমে যায়। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণে সংসারে সমতা ফিরে আসে। নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।