সারিয়াকান্দি পৌর নির্বাচন: রাতে আলমগীরের নাম ঘোষণা, দিনে নৌকার ‘মাঝি’ মতিউর

বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌরসভা নির্বাচনে রাতের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহীর নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এক দিনের মাথায় আজ শনিবার নাটকীয়ভাবে নৌকার ‘মাঝি’ প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমানকে মেয়র পদে শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

মতিউর রহমান আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সিল-স্বাক্ষরসংবলিত দলীয় মনোনয়নের চিঠি তিনি হাতে পেয়েছেন।

কী কারণে এক দিনের ব্যবধানে দলীয় প্রার্থিতার পরিবর্তন হলো, সেটা বুঝতে পারছি না।
আলমগীর শাহী, বর্তমান মেয়র এবং এবার দলীয় মনোনয়নে রাতের ব্যবধানে বাদ পড়া প্রার্থী

এদিকে আলমগীর শাহী আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ থেকে প্রথম দফায় পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নামের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়, সেখানে তাঁর (আলমগীর শাহী) নাম ছিল। শনিবার বেলা ১১টায় দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয় থেকে মনোনয়নের চিঠি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী তিনি শনিবার বেলা ১১টায় দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে শোনেন, সারিয়াকান্দি পৌরসভার মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন আগেই তুলে নিয়েছেন মতিউর রহমান।

আলমগীর শাহী বলেন, ‘কী কারণে এক দিনের ব্যবধানে দলীয় প্রার্থিতার পরিবর্তন হলো, সেটা বুঝতে পারছি না।’

এর আগে ৩ ডিসেম্বর সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বর্তমান মেয়র আলমগীর শাহীকে বাদ দিয়ে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য সাতজনের নাম সুপারিশ করে জেলা আওয়ামী লীগে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নানের ভাগনে ও সারিয়াকান্দি পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম মফিজুল ইসলাম, সাংসদের দেবর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, দেবর (চাচাতো) ও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ সরদার ছাড়াও সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ ফারাজী, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আপেল মাহমুদ এবং উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিক আহম্মেদের নাম ছিল। পরে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে আলমগীর শাহীর নামও যুক্ত করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠানো হয়।

আলমগীর শাহী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ আবদুল মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমানে সাংসদ সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ফাটল ধরে।

২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সারিয়াকান্দি পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলমগীর শাহী। তিনি ৫ হাজার ৭৭৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে টিপু সুলতান পেয়েছিলেন ২ হাজার ৪৪৭ ভোট। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদ ফারাজী ও আবদুল হামিদ সরদার দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এর মধ্যে আবদুর রশিদ ফারাজী চামচ প্রতীকে ১ হাজার ২৫৩ ভোট এবং আবদুল হামিদ সরদার জগ প্রতীকে ৬১৬ ভোট পেয়ে হেরে যান। দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় উপজেলা আওয়ামী লীগ তখন দুজনকেই সাময়িক বহিষ্কার করে।

আলমগীর শাহী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাংসদ আবদুল মান্নানের ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমানে সাংসদ সাহাদারা মান্নানের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে ফাটল ধরে। এর জেরে ২০১৭ সালের ২৬ আগস্ট সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে জেলায় চিঠি পাঠায় উপজেলা আওয়ামী লীগ।