সাড়ে তিন মাসের কাজ পড়ে আছে সাড়ে তিন বছর

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার বাতাসী বাজার এলাকায় সড়কের বেহাল দশা
ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ৩ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার সড়কটি সংস্কারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে। কাজের মেয়াদ ছিল সাড়ে তিন মাসের। কাজ শুরুও হয়েছিল, কিন্তু সেই সাড়ে তিন মাসের কাজ আর শেষ হয়নি। বছরের পর বছর সড়ক সংস্কারের কাজটি শেষ না হওয়ায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের দেড় লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।


উপজেলার শিয়রবর থেকে মাকড়াইল পর্যন্ত লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের মাঝখানের অংশ পুরো বেহাল দশায়। সড়কটি ছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি)।

সূত্র জানায়, শিয়রবর থেকে মাকড়াইল পর্যন্ত ৩ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার অংশে দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দ ছিল। তা সংস্কার করতে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ওই বছরের ২৯ জুন। ওই সংস্কারকাজের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ঠিকাদার ছিলেন ফরিদপুরের এ কে এম আকরামুজ্জামান। সড়কটির মাটি খুঁড়ে খোয়া ফেলানো হয় কার্যাদেশ দেওয়ার প্রথম মাসেই। এরপর আর কাজ করেননি ঠিকাদার। কাজ না করায় ২০১৮ সালের মে মাসে ওই ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনের এলাকার সড়কের বেহাল দশা
ছবি: প্রথম আলো

কার্যাদেশ বাতিলের আগে একাধিকবার ঠিকাদার এ কে এম আকরামুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বারবারই বলতেন, ‘এই তো কাজ করছি, করব। জানা গেছে, তিনি একসঙ্গে উপজেলার অনেক সড়কের কাজ পাওয়ায় এমন ঢিলেঢালা ভাব দেখাতেন। খোয়া ফেলে যতটুকু সংস্কারের কাজ করেছিলেন, ততটুকুর বিল তিনি তুলে নিয়েছিলেন।


গত বছর ১২ জুন লোহাগড়ার কালনা থেকে লাহুড়িয়া হয়ে মহম্মদপুর পর্যন্ত সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে হস্তান্তর হয়। তখন থেকে সড়কটি সওজের। সওজ সূত্র জানায়, সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর গুরুত্ব বিবেচনা করে সওজে হস্তান্তর করা হয়েছে।

লোহাগড়া সদর থেকে উত্তরের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক এটি। এ সড়ক ব্যবহার করে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় যাতায়াত করতে হয়। সড়কটি দিয়ে এলাকার পাঁচটি ইউনিয়নের অন্তত দেড় লাখ মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। সড়কের ওই অংশ আশপাশের মাকড়াইল কেকেএস ইনস্টিটিউশন, শালনগর মর্ডান একাডেমি, রঘুনাথপুর আলিম মাদ্রাসাসহ আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করে। সড়কের পাশে রয়েছে লাহুড়িয়া, মাকড়াইল, বাতাসী, মণ্ডলভাগ, শিয়রবর ও মানিকগঞ্জ বড় বাজার। বাজারে পণ্য পরিবহনে প্রতিনিয়ত ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। চলাচল করে যাত্রীবাহী বাস ও অসংখ্য অটোরিকশা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটিতে খোয়া ফেলানো অবস্থায় পড়ে আছে। ওই অংশের প্রায় পুরোটাতেই বড় বড় গর্ত। বৃষ্টিতে গর্তে পানি-কাদা জমেছে। গাড়ির চাকা আটকে যাচ্ছে। যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি পার করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় হেঁটে চলাও কষ্টকর।
বাতাসী বাজারের ব্যবসায়ী রবি শেখ, পলাশ বিশ্বাস ও কার্তিক কুণ্ডুসহ আরও কয়েকজন জানান, বর্ষায় সড়কটিতে পানি-কাদায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। মাঝেমধ্যে গাড়ি গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে। এ অবস্থায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে। ব্যবসায়ীদেরও ভোগান্তির শেষ নেই। শুকনো মৌসুমে খোয়ার ধুলায় পুরো এলাকা ছেয়ে যায়। বাজারের পণ্য ধুলায় সয়লাব হয়। বাড়িতে রান্না করা খাবারের মধ্যেও ধুলা যায়। নষ্ট হয় কাপড়চোপড়। এ অবস্থা প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে।

নড়াইল সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ জানান, ওই বেহাল অংশ এবং কালনা থেকে সিডি পর্যন্ত পিচঢালাই করতে ১২ কোটি ৮৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়ে দরপত্র হয়েছে। ঠিকাদারও নিযুক্ত হয়েছে। কাজ করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সড়কটি দুই পাশে প্রশস্ত হবে। পিচঢালাই হবে ১৮ ফুট।


শাহরিয়ার শরীফ আরও জানান, এবার সড়কের কাজ শুরু হবে। বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। বৃষ্টি কমলে কাজ শুরু হবে।