সিভিল সার্জনের তালিকায় ‘বন্ধ থাকা’ ক্লিনিকগুলো বাস্তবে চালু

সিভিল সার্জনের তালিকায় বন্ধ থাকলেও দিব্যি চলছে কার্যক্রম। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর বাগমারার তাহেরপুরের রয়েল আল্ট্রাডাউন্ড ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে
ছবি: সংগৃহীত

নিবন্ধন না থাকার অভিযোগে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও বাস্তবে তালিকার ছয়টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চালু রয়েছে। তালিকার বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান দুই মাস আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বলা হলেও মালিকেরা বৈধ দাবি করে কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

গত বুধবার রাতে রাজশাহীর সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, উপজেলার আটটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকায় এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এগুলো হলো উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ায় অবস্থিত সাফল্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডক্টর ক্লিনিক, হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চানপাড়ার ওরিন ডায়াগনস্টিক, ওরিন ইসলামী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, তাহেরপুরের রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার ডা. আবদুল হাদি হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটের নিউ বাগমারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে চানপাড়ার ওরিন ডায়াগনস্টিক এবং ওরিন ইসলামী হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুই মাস আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। সিভিল সার্জনের পাঠানো তালিকায় এই দুই প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।

এদিকে সিভিল সার্জনের তালিকা ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর অনুসন্ধান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে কার্যক্রম চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো চিকিৎসক দেখা যায়নি। কয়েকজন নার্স ও প্যারামেডিক দিয়ে চালানো হচ্ছে চিকিৎসা কার্যক্রম। উপজেলার হাটগাঙ্গোপাড়ার সাফল্য ও ডক্টর নামের দুই প্রতিষ্ঠান চালু রাখা হয়েছে। রোগীদের ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এগুলোতে কোনো সিলগালা বা বন্ধ করা হয়নি বলে প্রতিষ্ঠান দুটির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। তাঁদের লাইসেন্স রয়েছে বলেও দাবি করেন।

এ ছাড়া এখানে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও রুরাল মেডিকেয়ার নামের দুটি বেসরকারি হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। এগুলোরও কোনো নিবন্ধন নেই।
অপর দিকে হামিরকুৎসা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম চলছে। এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির। তাহেরপুর বাজারে অবস্থিত রয়েল আলট্রাসাউন্ড অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারও চালু অবস্থায় দেখা যায়। প্রতিষ্ঠানটি চালু রাখার বিষয়ে ও বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এলাকায় মাইকযোগে ও অনলাইন মাধ্যমে ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আবদুল মালেক সরদার দাবি করেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানটি মানসম্মত ও সব ধরনের কাগজপত্র রয়েছে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বন্ধের তালিকায় তাঁর ক্লিনিকের নাম দেখানো হয়েছে।

উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবাইদুর রহমান বলেন, উপজেলার অবৈধ ও বিতর্কিত অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হয়নি। সেগুলোর কার্যক্রম প্রচার করে চালানো হচ্ছে। অথচ কয়েকটি ভালো মানের বৈধ ক্লিনিককে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এগুলোর কার্যক্রম চলমান বলে তিনি স্বীকার করেন। বৈধ ক্লিনিকগুলোকে চালু রেখে অন্যগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বানী বন্ধের তালিকায় থাকা ক্লিনিকগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে দাবি করে সাংবাদিকদের জানান, যাদের খোলার পাওয়ার (ক্ষমতা) আছে, তারা খুলতে পারে। এর দায়-দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে। তবে এবার ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা বা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে অভিযান চলবে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক দাবি করেন, তাঁরা যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেছেন, সেগুলো বন্ধই রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়ার পর বলেন, এগুলোর বিরুদ্ধে আবার অভিযান চালানো হবে।

আরও পড়ুন