সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, নৌকায় ১০ গুণ বেশি ভাড়া দাবি

তলিয়ে যাওয়া সিলেট-কোম্পানী-ভোলাগঞ্জ সড়ক দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। শুক্রবার দুপুরে কোম্পানীগঞ্জের বর্ণি এলাকায়ছবি: আনিস মাহমুদ

মহাসড়কের ওপর দিয়ে প্রবলবেগে প্রবাহিত হচ্ছে বন্যার পানি। মানুষ নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েছে। কারও কারও সঙ্গে রয়েছে গৃহপালিত প্রাণীও। নিরাপদ স্থানে বা জরুরি কাজে যেতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছাড়া উপায় নেই। এ অবস্থায় মাঝিরা নৌকার ভাড়া ১০ গুণ বেশি হাঁকছেন। এরপরও নৌকা পাচ্ছে না বন্যায় দুর্ভোগের শিকার হওয়া মানুষ।

শুক্রবার দুপুরে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ-ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়কের সিলেট সদর উপজেলার সালুটিকর এলাকার চিত্র এটি। সড়কটিতে এখন যানবাহনের বদলে নৌকা চলাচল করছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলোর মধ্যে একটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। সালুটিকর এলাকায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়ক। এতে সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সড়ক পথের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

সালুটিকর এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সড়কপথে সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জের থানার বাজারের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। এইটুকু পথ যাতায়াত করতে ২২-২৫ জনের ধারণক্ষমতার ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভাড়া চাওয়া হচ্ছে সাত থেকে আট হাজার টাকা। অনেকেই বাধ্য হয়ে বেশি টাকা দিয়ে নৌকায় উঠছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্ণি এলাকার সাব্বির হোসেন ও তেলিখাল এলাকার সঞ্জয় পাল সালুটিকর এলাকায় নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘাটে যাত্রী বেশি হলেও নৌকা কম জানিয়ে তাঁরা বলেন, ‘নৌকার মাঝিরা বেশি টাকা দাবি করছেন। এরপরও বাধ্য হয়ে যাব। বাড়িতে তো যেতে হবে। ঘরে কেউ নেই। পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে রেখে এসেছি। এখন ঘরের আসবাব ও গবাদিপশু রক্ষা করতে হবে।’

এদিকে কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল এলাকার কাউসার আহমদ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, ‘ঘরে বুকসমান পানি। নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য কোনো নৌকা পাচ্ছি না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপদে রয়েছি।’

নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন। শুক্রবার দুপুরে তলিয়ে যাওয়া সিলেট-কোম্পানী-ভোলাগঞ্জ সড়কের বর্ণি এলাকায়
ছবি: আনিস মাহমুদ

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মানুষ জরুরি প্রয়োজন ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সিলেটের দিকে আসছে। এ ছাড়া অনেকেই কোম্পানীগঞ্জে যাচ্ছে। সালুটিকর ব্রিজের নিচ থেকে কোম্পানীগঞ্জে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জে থানা বাজার থেকে যাত্রীরা সিলেটের উদ্দেশে সালুটিকর ব্রিজ এলাকায় আসছেন। কোনো নৌকা কোম্পানীগঞ্জ থেকে সালুটিকর এলাকায় এসে ভিড়লেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এতে সুযোগ বুঝে অধিক ভাড়া হাঁকছেন মাঝিরা।

কোম্পানীগঞ্জের বুড়দেও গ্রামের মো. আবদুল মজিদের (৩৮) ঘরে বুকসমান পানি। সালুটিকর এলাকায় তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে ঘরের বাসিন্দাদের নিয়ে সিলেটে এসেছি। তবে ঘরে মালামাল ও গবাদিপশুও রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে বাড়িতে যেতে হচ্ছে। সড়কপথে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় নৌপথে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এখন নৌকাও পাওয়া যাচ্ছে না। যদিবা পাওয়া যায়, অধিক দাম হাঁকাচ্ছেন মাঝিরা।’

আরও পড়ুন

নৌকায় বেশি ভাড়া চাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং। তিনি বলেন, সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের সড়কপথের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে যাতায়াত করছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানিয়ে ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।