সিলেট বোর্ডে পাসের হার বেড়েছে ১৮ শতাংশ

ভালো ফলাফল করায় উচ্ছ্বসিত মেয়েরা। আজ সকালে সিলেট সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে
ছবি: আনিস মাহমুদ

২০০১ সালে সিলেট বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর এবার সর্বোচ্চ পাসের হার রেকর্ড করা হয়েছে। এবার সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৭৮, যা গত বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। এ বছর সিলেট বোর্ডে জিপিএ-৫ প্রাপ্তিরও নতুন রেকর্ড হয়েছে।

করোনার কারণে এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার শুধু গ্রুপভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে) তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় গণিত ও ইংরেজি বিষয় ছিল না। সিলেট বোর্ডের মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা অন্য বিষয়গুলোতে ভালো ফল করলেও গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ফলাফল সন্তোষজনক হতো না। এতে সার্বিকভাবে বোর্ডের পাসের হারে প্রভাব পড়ত। তবে এবার গণিত ও ইংরেজি না থাকায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্য দুই বিভাগের তুলনায় ভালো ফলাফল করেছে। এতে বোর্ডে পাসের হার একলাফে বেড়েছে বলে মনে করেন বোর্ড–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সিলেট বোর্ডের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই বোর্ডের অধীন ২০১২ সালে সর্বোচ্চ পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ৭৮। এ বছর ওই বছরের রেকর্ড ভেঙে পাসের হার হয়েছে ৯৬ দশমিক ৭৮। গত বছর পাশের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৭৯। ২০০১ সালে বোর্ড প্রতিষ্ঠার সময় পাসের হার ছিল ৩৯ দশমিক ০৩, এখন পর্যন্ত এটাই সিলেট বোর্ডের সর্বনিম্ন পাসের হার।

এ বছর সিলেট বোর্ডে ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ১৫ হাজার ৭০০ জন পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪ হাজার ২৬৩ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এ বছর সিলেট বোর্ড নতুন রেকর্ড করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৫৭১ জন শিক্ষার্থী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বেড়েছে।

সিলেট বোর্ডের অধীন এবার ১৮৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। গতবারের তুলনায় এবার শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৪২টি। এ ছাড়া সিলেট বোর্ডের অধীন শতভাগ ফেল করেছে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

মানবিকে ভালো ফল

সিলেট বোর্ডে এবার অন্য দুই বিভাগের চেয়ে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করেছে। মানবিক বিভাগ থেকে ৮৮ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৮৬ হাজার ১৭৭ জন পাস করেছে, পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৬। ব্যবসায় শিক্ষার ৯ হাজার ৪৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৯ হাজার ৪৬ জন, পাসের হার ৯৫ দশমিক ৬৩। এদিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষার্থী ছিলেন ২১ হাজার ৪৯০ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২০ হাজার ৪৭৭ জন, পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৯।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ

পাসের হারে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বোর্ডে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৮৩৪ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৪৫৪ জন শিক্ষার্থী। মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৫১ জন।

সিলেট বোর্ডে সবদিক থেকেই ছেলেদের চেয়ে ভালো করেছে মেয়েরা
ছবি: প্রথম আলো

এগিয়ে মেয়েরা

সিলেট বোর্ডের ফলাফলে দেখা যায়, অংশগ্রহণ, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি-এ তিন বিভাগেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। সিলেট বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৩ জন। এর মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী ছিল ৬৬ হাজার ২২১ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থী ছিল ৫৩ হাজার ৩৩২ জন। মেয়ে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছে ৬৪ হাজার ৩১৪ জন, পাসের হার ৯৭ দশমিক ১২। এদিকে ৫১ হাজার ৩৮৬ জন ছেলে পরীক্ষার্থী পাস করেছে। ছেলেদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ৩৫।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতেও এগিয়ে আছে মেয়ে পরীক্ষার্থীরা। এ বোর্ড থেকে মোট ৪ হাজার ৮৩৪ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে মেয়ে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ২ হাজার ৮০৬ জন এবং ছেলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ২৮ জন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সম্মেলনকক্ষে ফলাফল ঘোষণা করেন বোর্ডের সচিব মো. কবির আহমদ ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন চন্দ্র পাল। এ সময় ফলাফল পর্যালোচনা করে তাঁরা বলেন, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা হওয়ায় এবার ভালো ফলাফল হয়েছে। তিনটি বিষয়ে পরীক্ষায় হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপও কম ছিল। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা এবার পরীক্ষার আগে প্রস্তুতির জন্য সময়ও বেশি পেয়েছে।