কার্যক্রমে অংশ নেবে না আইনজীবী সমিতি

সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রমে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। আদালতের বিচারক একটি মামলার জামিন শুনানি না করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে এই সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীরা।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন চলাকালে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশের করা মামলার আইনজীবী সালেহ আহমদকে আসামি করা হয়। আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে গত ৯ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। সে সময় করোনা পরিস্থিতির কারণে তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি।

বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাঁর পক্ষে সিলেট আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি, সাবেক সভাপতিসহ শতাধিক আইনজীবী জামিন শুনানির আবেদন করেন। কিন্তু আদালত নির্ধারিত তারিখে জামিন আবেদন করার কথা জানালে আইনজীবীরা অসন্তুষ্ট হন। এ অবস্থায় দুপুরে আইনজীবী সমিতি সভা করে আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিকেলে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান সভাপতি, সাবেক সভাপতিসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা সভা করে আদালতের কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী সোমবার সমিতি আরেকটি সভা আহ্বান করেছে। এ বিষয়ে ওই সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বাসিন্দা সিলেট আইনজীবী সমিতির সদস্য সালেহ আহমদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচন চলাকালে সহিংসতার অভিযোগে একটি মামলা হয়। বিশেষ ক্ষমতা আইনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করে। ওই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়ার পর ৯ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এ সময় করোনা পরিস্থিতির কারণে সালেহ আহমদ আদালতে হাজির হতে পারেননি। বৃহস্পতিবার সকালে মহানগর দায়রা জজ আবদুর রহিমের আদালতে সালেহ আহমদ হাজির হন। এ সময় তাঁর পক্ষে জামিন শুনানিতে জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি এ টি এম ফয়েজ, সাবেক চারজন সভাপতিসহ শতাধিক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অংশ নিতে একটি আবেদন করেন।

আদালতের বিচারক নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানি হবে বলে জানালে উপস্থিত আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আইনজীবীরা তখন আদালত থেকে বের হয়ে আইনজীবী সমিতির লাইব্রেরি ভবনে তাৎক্ষণিক সভায় মিলিত হন। সমিতির সভাপতি এ টি এম ফয়েজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভা থেকে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়।

নির্বাচনী সহিংসতা মামলার আসামি আইনজীবী সালেহ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন চলাকালে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডে। আমার বাড়ি ৭ নম্বর ওয়ার্ডে। বিএনপির সমর্থক হওয়ায় পুলিশ মামলাটিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে জড়িয়েছে। এরপরও আমি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলাম। সম্প্রতি পুলিশ অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করায় আদালত থেকে ৯ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। এরপর থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতে হাজির হতে পারিনি। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের পরামর্শে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানির আবেদন করা হয়েছিল।’

জামিন শুনানির অনুরোধ করা দুজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, মামলাটির জামিন শুনানির পরবর্তী তারিখ আগামী ২৩ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়। আসামি যেহেতু আদালতে আত্মসমর্পণ করেন, তাই তাঁরা আদালতকে জামিন শুনানির অনুরোধ করেন। কিন্তু আদালত নির্ধারিত ওই তারিখ ছাড়া শুনানি করতে সম্মত না হওয়ায় অনেক আইনজীবী অসন্তুষ্ট হন। আদালত থেকে বের হয়ে সমিতির সভায় এই নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।

এ বিষয়ে মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নওশাদ আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামি ওই আইনজীবী আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। তাঁর পক্ষে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির শতাধিক আইনজীবী একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সব আইনজীবীকে কোভিড-১৯–এর জন্য স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীর কথা বলার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। আদালতকে আত্মসমর্পণের জন্য হাজির হওয়া আইনজীবীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল। এতে বিচারক না–ও করেননি, হ্যাঁ–ও করেননি। এ ঘটনায় আইনজীবীরা কিছুটা সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়েছিলেন। আমাদের ধৈর্য ধরা উচিত ছিল।’