সিলেটে আটক বন্দুকধারী পরিবহনশ্রমিক নন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা

সিলেটে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষস্থলে বন্দুকসহ পুলিশের হাতে আটক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ফয়সল আহমদ ওরফে ফাহাদ। বুধবার দুপুরে সিলেট নগরীর চৌহাট্টায়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের কেন্দ্রস্থলের চৌহাট্টায় বুধবার দুপুরে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করার সময় আটক যুবক ফয়সল আহমদ ওরফে ফাহাদ (৩৮) সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক। সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানের পক্ষের একজন সক্রিয় নেতা।

সংঘর্ষের সময় বন্দুক হাতে ফয়সল ঠিক কার পক্ষে সক্রিয় ছিলেন, এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করার সময় ফয়সলকে পুলিশ আটক করেছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, বুধবার সকালে চৌহাট্টা এলাকায় সিটি করপোরেশনের ফুটপাত ও সড়ক বিভাজক নির্মাণকাজে বাধা দেন কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক। এ খবর পেয়ে বেলা একটার দিকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ম্যাজিস্ট্রেট ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানসহ অন্যান্য ওয়ার্ড কাউন্সিলরও।

পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করার সময় দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষ বাধে। ওই সময় মেয়র-ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও হামলার মুখে পড়ার উপক্রম হন। সেখান থেকে মেয়রকে হেলমেট পরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করার প্রস্তুতির সময় পুলিশও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। একটি একনলা বন্দুক হাতে ফয়সলকে হামলাস্থলে দেখা যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, মেয়রের সঙ্গে যখন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব ঘটনাস্থলে যান, সেই সময় ফয়সলও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফা সংঘর্ষের সময় ফয়সলকে বন্দুক হাতে পরিবহনশ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে ধাওয়া করতে দেখা গেছে।

এ ব্যাপারে চৌহাট্টা শাখার কার-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি অরুণ দেবনাথের দাবি, বন্দুকধারী যুবক পরিবহনশ্রমিক নন, এমনকি স্ট্যান্ডে রাখা কোনো গাড়ির মালিকও তিনি নন। কার পক্ষ নিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন, কীভাবে ধরা পড়লেন, এর কিছুই তাঁরা জানেন না।’

বন্দুকসহ ধরা পড়া ফয়সল স্বেচ্ছাসেবক লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক পদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান। বন্দুক নিয়ে তাঁর সঙ্গে ফয়সল ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কি না, এ বিষয়ে আফতাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সেখানে কোনো রাজনৈতিক ঘটনায় যাইনি। আমার সঙ্গে অন্য কোনো নেতা বা কর্মী ছিলেন না। সিটি করপোরেশনের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে শুনে মেয়রসহ আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। আমি নগর উন্নয়ন কমিটিতে আছি। হঠাৎ হামলার মুখে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর শুনেছি একজন বন্দুকসহ আটক করার খবর। ফয়সল সেখানে কেন গিয়েছিলেন, কার সঙ্গে, কার পক্ষ নিয়ে গিয়েছিলেন—এসবের কিছুই আমি জানি না।’

সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকায় অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গেলে মেয়র ও কাউন্সিলরদের ওপর হামলা চালান পরিবহনশ্রমিকেরা। এ সময় বন্দুকসহ একজনকে আটক করে পুলিশ।
ছবি: সংগৃহীত

আফতাব আরও বলেন, পরিবহনশ্রমিকেরা যে ধরনের আচরণ করেছেন, তা সবাই দেখেছেন। তাঁরা কাউকে মানতে চাননি। অনেকেই দেখেছেন, পরিবহনশ্রমিকেরা হামলার সময় বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করছেন। তিনি শুনেছেন, ফয়সলের হাতে বন্দুক রেখে পরিবহনশ্রমিকেরাই ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। পুলিশকে ঘটনাটি তদন্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, বন্দুকসহ আটক ব্যক্তির (ফয়সল) পরিচয় যা–ই থাকুক না কেন, তাঁকে অবৈধ অস্ত্র হাতে আটক করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র আইনে মামলা করা হবে।

চৌহাট্টায় ফুটপাত ও সড়ক বিভাজক নির্মাণের জন্য মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুই দফা সংঘর্ষে কাউন্সিলরসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা বন্দুক উঁচিয়ে মেয়র-কাউন্সিলরদের ধাওয়া করতে যান। বুধবার বেলা একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অবৈধ স্ট্যান্ডে রাখা মাইক্রোবাস-প্রাইভেট কারসহ ১৯টি গাড়িতে ঢিল ছুড়ে ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ ১৬টি ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।