সিলেটে এবার ফুল হাতে নতুন গ্রাফিতি

সিলেটের আরেকটি দেয়ালে আঁকা হয়েছে নতুন গ্রফিতি। আজ শনিবার সকালে সিলেট–সুনামগঞ্জ সড়কের আখা‌লিয়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কদিন আগেই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এলাকাসংলগ্ন একটি বাসভবনের দেয়ালে সুবোধের গ্রা‌ফি‌তির দেখা মিলে‌ছিল। এবার সিলেট শহরের আরেকটি দেয়ালে দেখা মিলল নতুন গ্রা‌ফি‌তির। শা‌বিপ্রবির মূল ফটক থেকে প্রায় এক কিলো‌মিটার দূরে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখা‌লিয়া এলাকায় নতুন এ গ্রা‌ফি‌তিটি আঁকা হয়েছে।

ওই গ্রা‌ফি‌তিতে দেখা গেছে, অন্ধকার থেকে একটি হাত আলোর দিকে হলুদ ফুল বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওই গ্রা‌ফি‌তির পাশেও ইংরে‌জি শব্দ ‘HOBEKI?’ (হবে‌কি) লেখা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে এ গ্রা‌ফি‌তি স্থানীয় ব্যক্তিদের চোখে পড়েছে বলে জানান আখা‌লিয়া এলাকার বা‌সিন্দারা। তবে এ গ্রা‌ফি‌তি কে বা কারা এঁকেছেন, সেটা কেউ বলতে পারছেন না।

এর আগে গত বুধবার সকালে আখা‌লিয়া এলাকায় টেলিফোনে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় কথা বলার দৃশ্যে দেখা গিয়ে‌ছিল সুবোধ সি‌রিজের গ্রা‌ফি‌তি। এবার একই এলাকায় নতুন গ্রা‌ফিতির দেখা মি‌লল। এসব গ্রাফিতি শা‌বিপ্রবি‌র উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবেই দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, ‘গ্রাফিতিগুলো কারা এঁকেছেন, সেটা আমাদের জানা নেই। তবে এসব গ্রাফিতি আমাদের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরছে বলে আমরা মনে করি।’

নতুন এ গ্রাফিতিতেও ‘হবে‌কি’ লেখা রয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

আন্দোলনের সঙ্গে গ্রাফিতির সম্পর্ক টেনে শাহরিয়ার আবেদীন বলেন, শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের জন্য উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে অহিংস আন্দোলন কর‌ছিলেন। ওই সময় পু‌লিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করার নামে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছিল। কিন্তু এর আগে শিক্ষার্থীরা পু‌লিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার জন্য আহ্বান জা‌নিয়ে‌ছিলেন। ফুল দিয়ে শান্তির আহ্বান জানানো হয়ে‌ছিল। কিন্তু পুলিশ ফুলের বিনিময়ে গুলি চালায়। তাই নতুন এ গ্রাফিতি ঠিক ওই দিনের চিত্রই তুলে ধরেছে বলে ধারণা করছেন তিনি।

সিলেট চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ও নাট্যব্যক্তিত্ব শামসুল বাসিত বলেন, প্রথমে সুবোধ, পরে অন্ধকার থেকে ফুল বাড়িয়ে দেওয়ার গ্রাফিতি দেখা গেল। এটা শাবিপ্রবির আন্দোলন–পরবর্তী অবস্থাই বোঝানো হতে পারে। কারণ শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। বলা যায়, শিক্ষার্থীরা একরকম অন্ধকারের মধ্যে আছেন। পরে কী হবে, সেটা শিক্ষার্থীরা জানেন না।

গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন কয়েক শ শিক্ষার্থী। ১৬ জানুয়ারি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করে এবং তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে এই আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে রূপ নেয়। দীর্ঘ আন্দোলন–অনশনের পর শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উপাচার্যের পদত্যাগ বিষয়ে মহামান্য আচার্য সমাধান দেবেন—এমন আশায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।