সিলেটে ছাত্রলীগের ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মিছিলে’ বিভাজন

নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সিলেটে ছাত্রলীগের বিভাজন দৃশ্যমান হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে সোমবার দুই ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন কমিটি ও কমিটিবিরোধী পক্ষ নগরে পৃথক মিছিল করেছে। নতুন কমিটির মিছিলের সামনে জেলা ও মহানগরের নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে চারটি মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে নেতৃত্বে দিতে দেখা গেছে।

বেলা আড়াইটার দিকে মিছিলটি শেষ হলে একই স্থানে গিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছে নতুন কমিটিবিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিতি ছাত্রলীগের একাংশ। রংপুরের পীরগঞ্জে সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে এই মিছিল হয়।

নগরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল সহকারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গিয়ে ছাত্রলীগের দুটি মিছিলে অংশ নিতে দেখা গেছে সাধারণ কর্মী–সমর্থকদের। এ রকম কয়েকজন কর্মী ও সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দুই পক্ষের মিছিলটি সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে হলেও পাল্টাপাল্টি হওয়ার কারণে এটি সিলেটে ছাত্রলীগের বিভাজনকে দৃশ্যমান করেছে।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময় কমিটিবিহীন থাকার পর ১২ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে সিলেট জেলা ও মহানগরের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। মো. নাজমুল ইসলামকে জেলার সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক এবং কিশওয়ার ইবনে জাহানকে মহানগরের সভাপতি ও মো. নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে ওই দিনই অভিযোগ ওঠে।

সিলেটে ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সংগঠনের একাংশ তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ করে। ওই দিনই তারা অভিযোগ করে, নতুন সভাপতি পদের জন্য ৪০ লাখ টাকা করে ৮০ লাখ টাকা এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২০ লাখ টাকা করে ৪০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়ী করা হয়।

ছাত্রলীগরে বিক্ষুব্ধ অংশটি ১৩ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে ‘টাকার বিনিময়ে করা কমিটি’ বাতিল না করা পর্যন্ত লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়। ছাত্রলীগের একাংশের ধারাবাহিক এই কর্মসূচিতে ‘১ কোটি ২০ লাখ টাকায় সিলেট ছাত্রলীগ নিহত’ প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করলে সর্বত্র চাঞ্চল্য দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ অংশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর ‘ছাত্রলীগের সমর্থক শিক্ষার্থী’ ব্যানারে এক ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে মানববন্ধনও হয়।

জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক জানিয়েছেন, কমিটিবিরোধী পক্ষের লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে নতুন কমিটি অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় ছিল। দুর্গাপূজায় মণ্ডপে হামলার চেষ্টা ও দেশজুড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলার প্রতিবাদে সোমবার বেলা আড়াইটায় একটি কর্মসূচি পালন করে। এ কর্মসূচিতে জেলা ও মহানগরের নতুন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ তাঁদের অনুসারী ছাড়াও সাধারণ কর্মী–সমর্থকেরা অংশ নেন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি নয়াসড়ক এলাকা প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। নতুন কমিটির মিছিলের সামনে চারটি মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে দাঁড়িয়ে জেলা ও মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে মিছিলের নেতৃত্বে দিতে দেখা গেছে।

এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান করে দেখা গেছে, নতুন কমিটির মিছিল শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর নগরীর তালতলা থেকে কমিটিবিরোধী পক্ষ মিছিল বের করে কোর্ট পয়েন্ট হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয়। মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতা আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও জেলা ছাত্রলীগের নেতা সৌরভ জায়গীরদারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জেলা সংগঠনের নেতা আশফাক আহমদ, মুহিবুর রহমান, আহমদ জিবান, মহানগরের নেতা ফয়েজুর রহমান, সৌমিক আহমদ, দীপংকর টিপু, ফাহিম রশিদ চৌধুরী, এ কে তুহিন। বক্তৃতায় তাঁরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বানের পাশাপাশি ‘টাকার বিনিময়ে’ ছাত্রলীগের নতুন কমিটি বাতিল করার দাবিও জানান।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, কেন্দ্রের তাৎক্ষণিক নির্দেশে তাঁরা সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে মিছিল করেছেন। একই আহ্বানে ছাত্রলীগের একাংশের পাল্টা মিছিল প্রসঙ্গে নাজমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো বিভাজনে বিশ্বাস করি না। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানাতে কেন্দ্রের নির্দেশে তাৎক্ষণিক মিছিলটি করা হয়েছে। মিছিলে আমরা চারজনই (নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) ছিলাম। আমাদের পরে ছাত্রলীগের ব্যানারে কোনো মিছিল হয়েছে কি না, জানি না।’

২০১৪ সালে গঠিত সিলেট জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয়। নগরীর টিলাগড়ে ছাত্রলীগ কর্মী খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২০ জুলাই গঠিত মহানগরের কমিটি ২০১৮ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার কারণে ওই বছরের ২১ অক্টোবর কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এর পর থেকে সিলেটে কমিটিবিহীন ছিল ছাত্রলীগ।