সিলেটে ত্রাণ না পেয়ে হট্টগোল, বানভাসিদের সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ

ত্রাণ না পেয়ে বিক্ষোভ করেন বানভাসি মানুষ। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। শনিবার বেলা সোয়া ১১টায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার থানা-বাজার পয়েন্টে
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে ত্রাণ না পেয়ে বানভাসি মানুষের বিক্ষোভ ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। পরে পুলিশ হট্টগোলকারী ব্যক্তিদের সরিয়ে দিয়েছে। আজ শনিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার থানাবাজার পয়েন্টে স্থানীয় প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় প্রশাসন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, আজ সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা পরিদর্শনে আসেন প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী এবং সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ। এ সময় সকাল ১০টার দিকে তিনি কোম্পানীগঞ্জের থানা-বাজার পয়েন্টে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলে স্থানীয় প্রশাসন বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন। ত্রাণ বিতরণের শেষ দিকে সহায়তা না পেয়ে বেশ কিছু বানভাসি মানুষ বিক্ষোভ ও হট্টগোল শুরু করেন। এতে পুলিশ বাধা দিলে হট্টগোলকারী ব্যক্তিরা আরও বিক্ষুব্ধ হন। এ সময় ত্রাণপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ ত্রাণপ্রত্যাশীদের সরিয়ে দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং প্রথম আলোকে বলেন, ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের শেষ দিকে কিছুটা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। তবে বিশৃঙ্খলা না বলে হট্টগোল বলাই ভালো। মন্ত্রী উদ্বোধনী পর্ব শেষ করে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করেন। এখানে ২০০ জন বানভাসি মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু এর চেয়ে আরও ১৫ থেকে ২০ জন ত্রাণপ্রত্যাশী অতিরিক্ত চলে এসেছেন। অতিরিক্ত আসা ত্রাণপ্রত্যাশীরা ত্রাণ না পেয়ে কিছুটা হট্টগোল করেছেন। পরে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে এবং পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে। ত্রাণের প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেলসহ প্রায় ২ হাজার ২০০ টাকার খাদ্যসামগ্রী ছিল। উপজেলায় ত্রাণের কোনো সংকট নেই বলেও তিনি জানান।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের ১৪৯টি গ্রামের ১৩৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপজেলায় ৪৬ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যার পানিতে কমবেশি প্লাবিত আছেন। এখানে বানভাসি মানুষের জন্য ৪৪ মেট্রিক টন চাল, ৮০০ প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী, নগদ ১ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে উপজেলা পরিষদ থেকে আরও ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে ২০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৫ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গোখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকার চাহিদাপত্র জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে।

থানা-বাজার এলাকায় ত্রাণের জন্য উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে না। খাবারের জন্য বানভাসি মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী আসবেন জেনে অনেক ত্রাণপ্রত্যাশী ত্রাণের আশায় অনুষ্ঠানস্থলে এসেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, তালিকার বাইরে এখানে কাউকে ত্রাণ দেওয়া হবে না। যাঁরা এখানে ত্রাণ পাবেন না, তাঁদের পরবর্তী সময়ে ত্রাণ দেওয়া হবে। এরপরই ত্রাণ না পেয়ে অনেকে অনুষ্ঠানস্থলে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেছেন। পরে হাতাহাতি শুরু হলে পুলিশ হট্টগোলকারী ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ত্রাণ বিতরণ চলাকালে তালিকার বাইরে ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ চলে এসেছিলেন ত্রাণ নিতে। তাঁরা কিছুটা হট্টগোল করেছেন। পরে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়েছে। তবে ত্রাণপ্রত্যাশীদের সঙ্গে পুলিশের কোনো ধরনের হাতাহাতি বা ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেনি।