সিলেটে নগর চত্বরের নাম হবে 'জনতার কামরান চত্বর'

স্থানীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগর চত্বর ফলক তুলে ‘জনতার কামরান চত্বর’ নতুন নামফলক সাঁটান। সিলেট নগর, ২৭ জুলাই। ফাইল ছবি
স্থানীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগর চত্বর ফলক তুলে ‘জনতার কামরান চত্বর’ নতুন নামফলক সাঁটান। সিলেট নগর, ২৭ জুলাই। ফাইল ছবি

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নামে ‘নগর চত্বর’কে ‘জনতার কামরান চত্বর’ করতে সম্মত হয়েছে সিটি করপোরেশনের পরিষদ।

আজ মঙ্গলবার সিসিক পরিষদের ভার্চ্যুয়াল সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বিষয়টি উত্থাপন করলে সবাই সম্মত হন। বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। বিকেলে মেয়র তাঁর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।

সিলেট নগর ভবনের সামনে কেন্দ্রস্থলের মোড়টি ‘সিটি পয়েন্ট’ বলে ডাকা হতো। গত রোববার মোড়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে সিলেটের প্রতীকখ্যাত আলী আমজদের ঘড়িঘর ও বাসাবাড়ির আদি কাঠামোর আদলে একটি স্থাপনা সেখানে স্থাপন করা হয়। গত রোববার সন্ধ্যায় মেয়র স্থাপনা উন্মোচন করলে সেখানে ‘নগর চত্বর’ নামফলক লাগানো হয়।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পরদিন গতকাল সোমবার দুপুরে স্থানীয় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নগর চত্বর ফলক তুলে ‘জনতার কামরান চত্বর’ নতুন নামফলক সাঁটান। তাঁদের দাবি, গত ১৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নামে নগর চত্বরের নামকরণ প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও মেয়র নতুন নাম সাঁটিয়েছেন।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, আজ সিসিক পরিষদের মাসিক সভায় মেয়র বিষয়টি উত্থাপন করে প্রয়াত মেয়র কামরানের নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করেন।

ভার্চ্যুয়াল সভায় মেয়র প্রারম্ভিক বক্তব্যে বলেন, ‘সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান স্মরণে কিছু করার প্রস্তাব পরিবারের কাছে আমিই প্রথম দিয়েছিলাম। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে স্থায়ী কিছু করার ইচ্ছার কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। এর মধ্যে নগর ভবনের সামনের মোড়ের নামকরণ তাঁর নামে করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে মুখে মুখে দাবি ওঠে। কিন্তু কোনো লিখিত প্রস্তাব সিটি করপোরেশনে বা আমার কাছে কেউ করেননি। নগর ভবনের সামনের মোড়টি সম্প্রতি একটি ব্যাংকের অর্থায়নে সৌন্দর্যবর্ধন করে ট্রাফিক সুবিধার জন্য একটি দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেটির উদ্বোধন করার সময় ফলকে নগর চত্বর নামটি ছিল। এটা নতুন কোনো নাম ছিল না, সিটি পয়েন্ট বলে ডাকা নামটিই নগর চত্বর বলে ফলকে লেখা হয়েছিল। সেখানে যেহেতু নতুন নামকরণ সাঁটানো হয়েছে, আমিই প্রস্তাব করছি, মোড়টি কামরানের নামেই হোক।’

সভা সূত্র জানায়, মেয়রের এ বক্তব্যের পরপরই ওয়ার্ড কাউন্সিলর সবাই একমত হন। এরপর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পরে নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো বিশিষ্টজনদের নামে নামকরণ করতে একটি কমিটি গঠন হয়। এ কমিটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবিত নাম পাঠাবে, চূড়ান্ত হলে সিসিক আনুষ্ঠানিকভাবে সেসব নামকরণ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগ নেবে।
বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে মেয়র বলেন, ‘সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কের নামকরণের জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নামে নগরের বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কের নামকরণের প্রস্তাব এসেছে। সব ক্ষেত্রে সিসিকের স্বচ্ছতার জন্য আমরা কমিটি করে দিয়েছি। কমিটির সুপারিশ পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে নামকরণ করা হবে।

সিসিক পরিষদের ভার্চ্যুয়াল সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগর চত্বরের নাম প্রয়াত মেয়র কামরানের নামে করার প্রস্তাব করেন। সিলেট নগর, ২৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
সিসিক পরিষদের ভার্চ্যুয়াল সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগর চত্বরের নাম প্রয়াত মেয়র কামরানের নামে করার প্রস্তাব করেন। সিলেট নগর, ২৮ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আরও বলেন, ‘সিলেটের প্রয়াত জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান, সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সিলেট পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান আ ফ ম কামালসহ প্রয়াত আরও বিশিষ্টজনের স্মৃতি সংরক্ষণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আরও কিছু নামকরণ প্রস্তাব আছে। আমরা এই নামগুলোও স্মরণে রাখব।’
সংবাদ সম্মেলনে সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান প্রমুখ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।