সিলেটে ‘নদীপ্রেমী সমাবেশ’, দখল-দূষণ ঠেকাতে ১০ দফা দাবি

নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে ‘নদীতীরে নদীপ্রেমী সমাবেশ’। গতকাল সকালে সিলেট নগরের সুরমা নদীর চাঁদনীঘাটেছবি: প্রথম আলো

সিলেট অঞ্চলের দীর্ঘতম নদী সুরমার যে অংশটি দখল ও দূষণে ক্ষয়িষ্ণু রূপ, ঠিক সেখানে দাঁড়ালেন তাঁরা। একে একে ব্যক্ত করলেন ছেলেবেলায় দেখা নদীর সেই দুর্দান্ত রূপ। নদীর দখল ও দূষণ ঠেকাতে উত্থাপন করলেন ১০টি দাবি। এসব দাবি বাস্তবায়নের আহ্বানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘নদীপ্রেমী সমাবেশ’।

আজ রোববার ছিল আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। এ উপলক্ষে সিলেটে কিনব্রিজ এলাকায় সুরমাতীরে এই সমাবেশ হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ অ্যালায়েন্সের শাখা সংগঠন সুরমা রিভার ওয়াটারকিপারের উদ্যোগে এই সমাবেশ হয়। এবারের আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচি প্রয়াত সাংবাদিক, লেখক ও নদীসংগ্রামী সৈয়দ আবুল মকসুদকে উৎসর্গ করা হয়।

সমাবেশে সূচনা বক্তব্য দেন বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাপা সিলেটের সহসভাপতি নাজিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে ১০টি দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন সিলেটের নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আল আজাদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জহিরুল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আক্কাস, প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক মোস্তফা শাহজামান চৌধুরী, সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আবদুল হাই আল হাদী, ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক মোহাম্মদ আশরাফুল কবির, ইনোভেটর কো-অর্ডিনেটর প্রণব কান্তি দেব, নারীনেত্রী ইন্দ্রানী সেন, ব্লু বার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আফরাহিম আহমেদ এলিজা, প্রাণী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘সোসাস’ কো-অর্ডিনেটর ওয়াজি আহমেদ, সমাজকর্মী বাবলু আল মামুন।

সমাবেশে উত্থাপন করা ১০টি দাবি হচ্ছে

  • আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সব নদীর সীমানা নির্ধারণ, নির্মোহভাবে দখলদার উৎখাত ও তা দখলমুক্ত রাখতে হবে।

  • নদী নামক জীবন্ত সত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

  • নদীতে ‘বাঁধ-ব্যারাজ-রেগুলেটর বসানোর বেষ্টনী নীতি’ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং ‘বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনার-২১০০’ নামের সেই একই ভুল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করতে হবে।

  • মৃত ও ভরাট নদী ড্রেজিং করে তার প্রবাহ ও নাব্যতা পুনরুদ্ধার করতে হবে এবং নদীর মাটি ও তীর ইজারা দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

  • ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসমূহ, নগর উন্নয়ন সংস্থাসমূহ, বিআইডব্লিটিএ ও নদী কমিশনকে দৃঢ়ভাবে নদীবান্ধব নীতি অনুসরণ করতে হবে।

  • বাংলাদেশকে জাতিসংঘ প্রণীত পানিপ্রবাহ আইন-১৯৯৭ অবিলম্বে অনুস্বাক্ষর এবং সে অনুযায়ী নদীরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে, তার ভিত্তিতে একটি আঞ্চলিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নীতি-কৌশল প্রণয়ন ও সব আন্তসীমান্ত নদীর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

  • সব শিল্পকারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্ল্যান্ট সংযোজন ও ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

  • শহুরে গৃহস্থালি ও হাসপাতাল বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ ও তরল বর্জ্য পরিশোধন করা সম্পূর্ণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

  • নদীর ওপর কাঁচা ও পাকা পায়খানা নির্মাণ বন্ধ এবং জমিতে রাসায়নিক সার-কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

  • নৌযান থেকে নির্গত ময়লা, বর্জ্য, তেল পানিতে ফেলা নিষিদ্ধ ও নৌযানে তেলের পরিবর্তে গ্যাস বা সোলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে।

সিলেট নগরীর পাশ দিয়ে প্রবহমান নদী সুরমা তীরে ‘নদীপ্রেমী’ সমাবেশ ছাড়াও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ছৈফাগঞ্জবাজারে ‘মরা সুরমা’ নদীর উৎসমুখে দুপুরে গ্রামীণ নাগরিক সভা ও মানববন্ধন হয়। বিকেলে কানাইঘাট উপজেলার আন্দুগাং, জৈন্তাপুর উপজেলার কাপনা নদী ও লাল শাপলার বিল খ্যাত কেন্দ্রী হাওরের কুলিখাল ও পুঙ্গাখাল জলমহাল হিসেবে ইজারা দেওয়ার প্রতিবাদে নদীতীরে পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন হয়। বাপা, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার ও সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের যৌথ উদ্যোগে মানববন্ধন হয়।