সিলেটে ব্লগার অনন্ত হত্যা মামলার সাক্ষী না আসায় পেছাল সাক্ষ্য গ্রহণ

ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ
Ekush

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সাক্ষীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়েছে। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আজ মঙ্গলবার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। সাক্ষীরা না আসায় ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল জজ মো. নুরুল আমিন সাক্ষ্য গ্রহণ পিছিয়ে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।

মামলা পরিচালনায় বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত আলোচিত এ মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। সাক্ষীদের আগামী তারিখে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে বলেছেন আদালত। ১০ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানোর কথা বলেছি।’

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মামলা পরিচালনায় থাকা আইনজীবীরা জানিয়েছেন, মামলার ১৩ জন সাক্ষীর আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে। এর মধ্যে অনন্তের নিকটাত্মীয়সহ এক আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট, অনন্তের লাশের ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক, মামলার তদন্তকারী পুলিশ ও সিআইডির কর্মকর্তারা রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ দ্রুত সম্পন্ন হলে মামলার বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুত হবে। এ জন্য সাক্ষ্য না দেওয়া সাক্ষীদের সমন পাঠিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা বলেছেন মামলাসংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

সাক্ষ্য না দেওয়াদের মধ্যে অনন্ত বিজয় দাশের ভগ্নিপতি আইনজীবী সমর বিজয় সী শেখর রয়েছেন। সাক্ষ্য না দেওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাক্ষ্য না দেওয়ার পেছনে কারণ নেই। আমি বরং মামলার অন্যান্য পাবলিক সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ যাতে দ্রুত হয়, সেই চেষ্টা করেছি। পারিবারিক কিছু ব্যস্ততায় এই তারিখে সাক্ষ্য দেওয়া হয়নি। আগামী তারিখে অবশ্যই সাক্ষ্য দেব।’