সিলেটে ব্লগার অনন্ত হত্যায় সাক্ষ্য দিলেন চিকিৎসক

অনন্ত বিজয় দাশ

সিলেটে বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ (৩২) হত্যা মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের প্রস্তুতের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সামসুল আমিন। সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আজ রোববার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্ধারিত তারিখে ১৬তম সাক্ষী হিসেবে তিনি সাক্ষ্য দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনায় অংশ নেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম। তাঁকে সহায়তা করেন আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও সৈয়দ মোহাম্মদ রাহাত। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শাহ আলম মহি উদ্দিন।

আদালত সূত্র জানায়, সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী হিসেবে চিকিৎসক সামসুল আমিন মামলার একজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন। তিনি সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করার বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। ট্রাইব্যুনালকে তিনি বলেছেন, নিহত অনন্ত বিজয় দাশের সুরতহাল পুলিশ কর্তৃক ওসামানী মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রস্তুত করা হয়েছিল।

আইনজীবী এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকের সাক্ষ্য গ্রহণ নিয়ে এ পর্যন্ত আলোচিত এ মামলার ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে। অন্য সাক্ষীদের আগামী তারিখে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে বলেছেন আদালত। ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১৯ জানুয়ারি সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। বিজ্ঞান নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন অনন্ত। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে অনন্ত সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের এক দিন পর অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হচ্ছেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এ বি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকার সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক। ফারাবী বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।