সিলেটের করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক পরিবারের সিদ্ধান্তে ঢাকায়, দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের

সিলেট
সিলেট

সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চিকিৎসককে পরিবারের সিদ্ধান্তেই ঢাকায় নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গতকাল বুধবার রাতে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলা হয়।

ওই চিকিৎসককে ঢাকায় পাঠানো নিয়ে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নানা কথা ছড়ায়। তাতে সিলেটের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বক্তব্য দেন এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. ইউনুছুর রহমান ও উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায়।

সংবাদ সম্মেলনে হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে আক্রান্ত হওয়া ওই ব্যক্তি স্বনামধন্য একজন চিকিৎসক। পাশাপাশি তিনি মেডিকেল কলেজের একজন সহাকারী অধ্যাপক। মঙ্গলবার রাতে তিনি শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন। তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তিনি নিজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে কেবিনে রাখার অনুরোধ করেন। তাঁকে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে স্ত্রীও ছিলেন। তিনিও চিকিৎসক। রাতেই তাঁকে অক্সিজেন সরবরাহ করার পর তাঁর অবস্থা উন্নতি হয়। পরে তিনি কেবিনেই ছিলেন। রাতে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সময়ে সময়ে আইসিইউ বিশেষজ্ঞের যোগাযোগ হয়।

ওই চিকিৎসকের অবস্থা অপরিবর্তিত ছিল। বুধবার সকালে সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এক বৈঠক হয়। বৈঠকে করোনা আক্রান্ত ওই চিকিৎসকের চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তিনি সম্মতি দিলে তাঁকে শামসুদ্দিন হাসপাতালেই সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। তবে তাঁর পরিবার থেকে বারবার তাগিদ আসছিল, তাঁকে যেনে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ওসমানী হাসপাতালে অন্য রোগী থাকায় সেখানে স্থানান্তর সম্ভব ছিল না। তারপরও হাসপাতালের পরিচালক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরাও মত দেন, ওসমানী হাসপাতালে নেওয়া ঠিক হবে না।

হিমাংশু লাল রায় বলেন, ‘চিকিৎসকের পরিবার থেকে এক ধরনের চাপ দেওয়া হচ্ছিল, তাঁকে যেন ঢাকায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হয়। এ জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থার অনুরোধ করা হয়। আমরা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগও করেছি। কিন্তু কেউই করোনায় আক্রান্ত রোগীকে এয়ার-অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে চায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ হয়েছিল। তারাও বন্দোবস্ত করতে পারেনি। পরবর্তীতে একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সুবিধা সম্পন্ন অ্যাম্বুলেন্সে করে ওই চিকিৎসককে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে দুটি আইসিইউ শয্যা এবং দুটি ভেন্টিলেটর রয়েছে। তবে হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ছিল না। অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ২০টি বড় সিলিন্ডার কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সিলিন্ডার লাগানো রয়েছে। তা দিয়ে ভেন্টিলেটর এবং আইসিইউয়ের সব কাজ চালানো সম্ভব। হাসপাতালের করোনায় আক্রান্ত রোগীর সেবা দেওয়ার সব সামর্থ্য রয়েছে। তারপরও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালে আইসিইউ নেই, ভেন্টিলেটর নেই। এসব ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক।

ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার ইউনুছুর রহমান বলেন, সিলেটে করোনা আক্রান্তদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিভাগের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেটাকে করোনামুক্ত রাখতে এমন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে না। শামসুদ্দিন হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য নয়টি ভেন্টিলেটর কয়দিনের মধ্যেই আনা হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটে করোনা চিকিৎসার জন্য গঠিত চিকিৎসক দলের প্রধান শিশির কান্তি চক্রবর্তী, শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত কুমার মহাপাত্র, আইসিইউ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মইনুল ইসলাম।

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, আক্রান্ত ওই চিকিৎসক গত রাতে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছেছেন। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।