সীতাকুণ্ডে অর্ধশতাধিক ভারতীয় সেনার স্মরণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’র উদ্বোধন মঙ্গলবার

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে নির্মিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ ভাস্কর্যটি আগামী মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় এখানে জীবন উৎসর্গকারী অর্ধশতাধিক ভারতীয় সেনার স্মরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।প্রথম আলো

বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জীবন উৎসর্গকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর অর্ধশতাধিক সদস্যের স্মরণে নির্মিত ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ ভাস্কর্যটি আগামী মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আ ম ম দিলসাদ এবং সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা।

ভাস্কর্যটি গত ২৬ মার্চ উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সেটি স্থগিত হয়ে যায়।

এদিকে মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র এবং প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের স্থান উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের ছোটকুমিরা বাজার এলাকায় ‘স্মৃতি-৭১’ ভাস্কর্য পাহারায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই ‍দুটি ভাস্কর্য পাহারায় তিনজন করে মোট ছয়জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন বলে জানান ওসি ফিরোজ হোসোন মোল্লা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে চন্দ্রনাথ ধাম তীর্থের হনুমান মন্দিরের কাছেই। নির্মিত ভাস্কর্যটির রং করার কাজ শেষ। সেখানে ধোয়ামোছা চলছে। একজন রাজমিস্ত্রি নামফলক লাগানোর জন্য ফলকস্থানটি প্রস্তুত করছেন। ভাস্কর্যটির পেছনে স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের মানচিত্র রয়েছে। ভাস্কর্যটির সামনে করা হয়েছে ফুলের বাগান।

চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ প্রথম আলোকে বলেন, মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নির্মাণে ২৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। ২২ ডিসেম্বর সেটি উদ্বোধন করা হবে। ভারতীয় হাইকমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেটি উদ্বোধন করবেন। উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ মোশাররফ হোসেন।

মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন সীতাকুণ্ড পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম, সাবেক মেয়র শফিউল আলম, মহসিন জাহাঙ্গীর ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন। তাঁরা জানান, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুক্তি বাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সদস্যরা উপজেলার ছোট দারোগাহাট থেকে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে সম্মুখযুদ্ধ শুরু করেন। যুদ্ধ করতে করতে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় পৌঁছান ১৬ ডিসেম্বর। আর পিছু হটে পাকিস্তানি বাহিনী। বিকেলে যখন বিজয়ের ঘোষণা আসে, তখন মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। অনেকে তাঁদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান। এমন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অর্ধশতাধিক ভারতীয় সেনা ও বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ফলে আবার যুদ্ধ শুরু হয়, চলে ১৭ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত। ১৭ ডিসেম্বর সীতাকুণ্ড উপজেলা হানাদারমুক্ত হয়। ভারতীয় সেনাদের তখন চন্দ্রনাথ পাহাড়ের নিচে গজারিয়া দিঘির পাড়ে দাহ করা হয়।