সীমান্ত পেরিয়ে সংসার করতে এসে ভারতীয় নারী গ্রেপ্তার

সন্তানসহ গ্রেপ্তার ভারতীয় নারী সুনিয়া সাঁউ।
প্রথম আলো

কাজের সন্ধানে দিল্লিতে গিয়ে এক নারীর সঙ্গে সংসার পেতেছিলেন বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা ওবাইদুল হক। গত জুনে দেশে ফিরে লকডাউনের কারণে আর দিল্লি যেতে পারেননি তিনি। তবে সুনিয়া সাঁউ (২৯) নামের ওই ভারতীয় নারী স্বামীর সন্ধানে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে আসেন বাংলাদেশে। সীমানা পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে সংসারও শুরু করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে ওই নারীকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

সুনিয়ার বাড়ি ভারতের ছত্রিশগড় রাজ্যের মঙ্গলী জেলার জেড়াগাঁও থানায়। তাঁর বাবা মৃত ফাগুরাম সাঁউ। ওবাইদুল হকের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কাশিপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর চানদোলার পাড় গ্রামে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্তানসহ ওই নারীকে ফুলবাড়ী থানায় হস্তান্তর করেছে বিজিবি।

বিজিবি ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওবাইদুল চার বছর আগে ভারতীয় ভিসা নিয়ে দিল্লিতে কাজ করতে যান। এ সময় সুনিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জুন মাসে ওবাইদুল বাড়িতে এলে তাঁর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। লকডাউনের কারণে তিনি আর ভারতে যেতে পারেনি। এদিকে স্বামীর বাড়িতে আসার জন্য সুনিয়া সাঁউ গত ২৫ জুলাই দুই দেশের দালালের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর স্থানীয়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত এক মাস ওবাইদুল হকের বাড়িতে বসবাস করেন।

গত কয়েক দিন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে ওবাইদুলের প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। এলাকাবাসী একে একে বিষয়টি জেনে যান, যা বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত গড়ায়। এরপর সুনিয়াকে আটক করা হয়।
আবদুল সাত্তার, ওবাইদুল হকের প্রতিবেশী

ওবাইদুলের প্রতিবেশী আবদুল সাত্তার (৫৫) জানান, ওবাইদুল প্রথমে ফুলবাড়ীর কল্পনা বেগম নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সুখেই চলছিল সেই সংসার। স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী বাড়িতে আসার পর থেকে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল। গত কয়েক দিন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে প্রথম স্ত্রী কল্পনার সঙ্গে ওবাইদুলের প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। এলাকাবাসী একে একে বিষয়টি জেনে যান, যা বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত গড়ায়। এরপর সুনিয়াকে আটক করা হয়।

ওবাইদুল হক দিল্লিতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। সে সময় সুনিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর আগেই দিল্লি শহরে ধর্মীয় মতে তাঁকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের ঘরে একটি তিন বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে।

সুনিয়া সাঁউ হিন্দিতে বলেন, চার বছর আগে তাঁরা প্রেম করে দিল্লিতে বিয়ে করেন। জন্মভূমি ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে তিনি বাংলাদেশে স্বামীর বাড়িতে এসেছেন। তাঁর একটি তিন বছরের ছেলে রয়েছে। তিনি এখানেই ঘর-সংসার করে থাকতে চান।
ওবাইদুল হক বলেন, তিনি দিল্লিতে রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। সে সময় সুনিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। চার বছর আগেই দিল্লি শহরে ধর্মীয় মতে তাঁকে বিয়ে করেন তিনি। তাঁদের ঘরে একটি তিন বছরের ছেলেসন্তান রয়েছে। তিনি এই সংসার করতে চান।

কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মণ্ডল বলেন, ওই নারী ভারতীয় নাগরিক। তাঁর কাছে ভারতের নাগরিকত্ব সনদ রয়েছে। বিনা পাসপোর্টে বাংলাদেশে আসায় তাঁকে আটক করেছে বিজিবি।

বিজিবির ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তৌহিদুল আলম জানান, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে সুনিয়াকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজীব কুমার রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে আসায় সুনিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।