সুই সুতা আর গয়নায় নারীর সফলতার গল্প

পাবনায় চলছে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যমেলা। শেষ হবে আজ শনিবার। গতকাল ছুটির দিনে পছন্দের জিনিস কিনতে অনেকেই এসেছিলেন এই মেলায়। শহরের দোয়েল চত্বরে।  ছবি: প্রথম আলো
পাবনায় চলছে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যমেলা। শেষ হবে আজ শনিবার। গতকাল ছুটির দিনে পছন্দের জিনিস কিনতে অনেকেই এসেছিলেন এই মেলায়। শহরের দোয়েল চত্বরে। ছবি: প্রথম আলো

অনুজা সাহা। বয়স ৩০। একসময় গৃহিণী ছিলেন। তবে ভালো পিঠা তৈরি করতেন। ২০১৩ সালে সে দক্ষতা কাজে লাগিয়েই পিঠা তৈরি ও বিক্রি শুরু করেন। পুঁজি বলতে কিছুই ছিল না তাঁর। ইচ্ছেশক্তি ও দৃঢ় মনোবলে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। পিঠার পাশাপাশি তৈরি করছেন মুখরোচক নানা খাদ্যপণ্য। সরবরাহ করছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠান, দোকানে। কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন প্রায় ২০০ নারীর। পেয়েছেন জয়িতার সম্মান।

পাটপণ্য নিয়ে কাজ করেন রাজশাহীর উম্মে হাজ সিদ্দিকা (৫০)। পাট দিয়ে তৈরি করেন ব্যাগ, গয়না ও ঘর সাজানোর নানা পণ্য। শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ সালে। তখন পুঁজি বলতে ছিল পাটপণ্য তৈরির ওপর নিজের প্রশিক্ষণ ও পাঁচ হাজার টাকা। এ দিয়েই চেষ্টা করেছেন। পাট দিয়ে নান্দনিক সব পণ্য তৈরি করে নজর কেড়েছেন ক্রেতাদের। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। নিজে পণ্য তৈরির পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন অন্যদের। যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে পেয়েছেন সেরা উদ্যোক্তার সম্মান।

উদ্যমী এই দুই নারী অংশ নিয়েছেন পাবনার মাইক্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (মাইডাস) মেলায়। শহরের দোয়েল চত্বরে বসা এই মেলায় তাঁদের মতো ৪১ জন নারী উদ্যোক্তারা স্টল দিয়েছেন। সবারই সফল হওয়ার পেছনে আছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প। গতকাল শুক্রবার দুপুরে মেলায় ঘুরতে গেলে এসব গল্প শোনান তাঁরা।

অনুজা সাহা বলেন, উদ্যোক্তা হতে নিষ্ঠা, সততা ও ইচ্ছেশক্তিই প্রধান। এই তিনে মিলে কাজ করলে যে কেউ সফল হতে পারবেন। একই রকম ভাষ্য রাজশাহী থেকে আসা বিহঙ্গ ফ্যাশন হাউস ও গোধূলি বুটিকসের প্রতিষ্ঠাতা মৌসুমী আক্তারের। তিনি একসময় সরকারি চাকরি করতেন। ২০০৫ সালে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পুঁজি ছিল পাঁচ হাজার টাকা। এ পুঁজিতেই ১০ জন নারীকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে তিনি তিনটি ফ্যাশন হাউসের মালিক। নিজের তৈরি পোশাক সরবরাহ করছেন দেশে ও বিদেশে। কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন ৩৫০ জন নারীর।

নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি গয়না।  প্রথম আলো
নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি গয়না। প্রথম আলো

মৌসুমী আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, চাকরি হচ্ছে নিজের ও পরিবারের জন্য। আর ব্যবসা নিজের পাশাপাশি অন্যদের জন্য। তাই চাকরি ছেড়ে ব্যবসা ধরেছি।  খুলনা থেকে মেলায় এসেছেন তারানা তাবাসসুম (৩০)। পড়ালেখা করেছেন ফ্যাশন নিয়েই। কাজ করেছেন বিবিআনা নামের ফ্যাশন হাউসে। এখন তিনি নিজেই উদ্যোক্তা। তৈরি করছেন নারীদের বিভিন্ন পোশাক ও গয়না। আইন বিষয়ে পড়লেও তা টানেনি ঢাকার রুবাইয়া নাহিদকে (৩২)। স্বামীর অনুপ্রেরণায় আড়াই বছর আগে নিজের ঘরে থাকা একটি সেলাই মেশিন দিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। এখন নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি ফ্যাশন হাউস।

মেলায় অংশ নেওয়া পাবনার হোসনে আরা (৫০), লাবণি ইয়াসমিন (৩৬) ও ফারহানা রুমাও (৩৭) সুই–সুতার ফোঁড়ে সফল হয়েছেন। নারী, শিশু, কিশোরদের পোশাক তৈরির পাশাপাশি, বিভিন্ন হস্তশিল্প, নকশিকাঁথা, ঘর সাজানোর তৈজসপত্র তৈরি করেন তাঁরা। ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মেলা শেষ হবে আজ শনিবার। মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান মাইডাসের চেয়ারম্যান ও স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাইডাস দীর্ঘ ৩৭ বছর নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় কাজ করছে। তাঁদের বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করছে। নারীরা তাঁদের প্রচেষ্টা দিয়ে সফল হচ্ছেন। তাঁরা এখন অন্যদের কাছেও অনুপ্রেরণার নাম।