‘সুইচ দিছি ভোট অই গেছে, এখন খুবই ভালা লাগের’

জগন্নাথপুর পৌর নির্বাচনে মক ভোটিং–এর দৃশ্য। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জগন্নাথপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব সুলেমান মিয়া ইভিএম কী, তা চেনেন না। ইভিএমে ভোট কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। তবে এবার ভোটের আগে ইভিএমে নমুনা ভোট দিতে পেরে আনন্দিত তিনি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের জগন্নাথপুর মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনীতে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শিখতে এসেছিলেন তিনি।

সুলেমান বলেন, ‘হুনছি ইবার মেশিনে ভোট অইব। জীবনে কোনো দিন মেশিনে ভোট দিছি না। এর লাগি ভয় ভয় করছিল। ভয়ের লগে আগ্রহও আছিল। মেশিনে ভোট কিলা দেইন, ইতা হিকানো অইর খবর পাইয়া কেন্দ্রে আইয়া ভোট দেওয়া হিকছি। মেশিনে আগুলের চাপ দেওয়ার পর আমার ছবি ভাসছে। এরপর একটা চিহে (প্রতীকে) টিপা সুইচ দিছি, ভোট অই গেছে। এখন খুবই ভালা লাগের। কেউ জালভোট দিতা পারতা নায়।’

সুলেমান মিয়ার মতো প্রদর্শনীতে আসা অনেক ভোটার বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে জাল ভোটের সুযোগ নেই। তাই তাঁরা খুশি। জগন্নাথপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা দুলাল মিয়া জালভোটের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা বললেন। গত ১০ অক্টোবর উপনির্বাচনে এসে দেখেন, তাঁর ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। তাই তিনি হতাশ হয়ে বাড়ি ফেরেন। এবার ইভিএমে ভোট হবে শুনে তিনি খুশি। দুলাল বলেন, তাঁর ভোট আর কেউ দিতে পারবে না, তাই তিনি খুশি।

প্রথমবারের মতো বলে জগন্নাথপুর পৌরসভায় ইভিএমে ভোটের সঙ্গে ভোটাররা অপরিচিত। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থানীয় ভোটারদের অংশগ্রহণে ‘মক ভোটিং’ (নমুনা ভোট প্রদর্শনী) আয়োজন করা হয়।

উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে ১৬ জানুয়ারি জগন্নাথপুরসহ সারা দেশের ৬৬টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে। প্রথমবারের মতো জগন্নাথপুর পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। নতুন এই পদ্ধতির সঙ্গে ভোটাররা অপরিচিত। এ জন্য আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয়ের উদ্যোগে পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে স্থানীয় ভোটারদের অংশগ্রহণে ‘মক ভোটিং’ (নমুনা ভোট প্রদর্শনী) আয়োজন করা হয়।

এবার জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রথমবারের মতো ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের আয়োজন করায় অনেক প্রার্থী নিজেদের পক্ষে প্রচারণার পাশাপাশি ভোট প্রদানের পদ্ধতি বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন।

জগন্নাথপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ভোট চাইতে গেলে ভোটাররা জানতে চান ইভিএম মেশিনে কীভাবে ভোট হবে। ভোটারদের মুঠোফোনের মাধ্যমে ভোট প্রদানের পদ্ধতি শেখাতে হচ্ছে। তবে বৃহস্পতিবার ভোট প্রদান পদ্ধতির প্রদর্শনী আয়োজন করায় ভোটারদের মধ্যে ইভিএম বিষয়ে জ্ঞান তৈরি হবে।

জগন্নাথপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জগন্নাথপুর পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ইভিএম পদ্ধতির বিষয়ে ভোটারদের কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের আয়োজন ভালো হয়েছে।

বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হারুনুজ্জামান জানান, অনুন্নত পৌর এলাকায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের আয়োজন ঠিক হয়নি। এ পদ্ধতিতে ভোটারদের কোনো জ্ঞান না থাকায় নির্বাচনে কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, প্রথমবারের মতো এ পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তাঁরা ইভিএম পদ্ধতিতে কীভাবে ভোট প্রদান করা হয়, তা প্রদর্শনী ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটারদের ধারণা দিয়েছেন। এর আগে মাইকিং করে প্রদর্শনীতে অংশ নিতে প্রচারণা চালানো হয়।