সুগন্ধা থেকে বালু উত্তোলন,ভাঙছে গ্রাম, ফসলি জমি

সুগন্ধা নদীর ভাঙনের কবলে ঝালকাঠি সদরের দেউরী গ্রামের বসতভিটা ও ফসলি জমি। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বালু তোলার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক ছবি
ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে খননযন্ত্র জব্দ ও শ্রমিকদের সাজা দিলেও এ কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে নদী থেকে বালু তোলার কারণে শহর রক্ষা বাঁধসহ তিনটি গ্রাম ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের শিকার গ্রামগুলো হলো সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দিয়াকুল, দেউরিও ধানসিড়ি ইউনিয়নের কিস্তাকাঠি গ্রাম। শহরের লঞ্চঘাট ও এসব গ্রামের আশপাশে নদীতে খননযন্ত্র বসিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্রের সাহায্যে ৪০-৫০টি বালুবাহী বাল্কহেড ভর্তি করে পুকুরসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভরাটের কাজে সুগন্ধা নদীর বালু বিক্রি হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের অন্তত ১৬ জন বালু তোলার ব্যবসা করে থাকেন। তাঁদের প্রত্যেকের বালু তোলার অনুমোদনহীন খননযন্ত্র ও বালু বহন করার বাল্কহেড রয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন শহর যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হক খলিফা ও তাঁর ছেলেরা।

এ বিষয়ে আবদুল হক খলিফা বলেন, ‘সুগন্ধা নদী থেকে যদি বালু না তোলা হয়,তবে সরকারের সব উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে। আমরা বৈধভাবে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে সুগন্ধা নদী থেকে বালু তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা থেকে বালুমহাল হিসেবে ইজারা নিতে চাই। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হবে।’

কয়েকজন বালু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালু তোলার ব্যবসার জন্য তিন ধরনের নৌযান ও খননযন্ত্র রয়েছে। এই বালু নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছে নৌযান (বাল্কহেড) এবং নৌযান থেকে পুকুর জলাশয় ও স্থাপনা ভরাটের জন্য রয়েছে আরেকটি যন্ত্র। বালু তোলার ক্ষেত্রেও ব্যবসায়ীরা সামর্থ্য অনুযায়ী এই তিন ভাগে বিনিয়োগ করেন। প্রতি বর্গফুট বালু ২০-৩০ পয়সায় বিক্রি করা হয়। বালু বিক্রি করে দিনে এক লাখ টাকার বেশি আয় হয় ব্যবসায়ীদের।

গত ২৮ এপ্রিল দুপুরে লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে। খননযন্ত্রের কাছে গিয়ে বালু বহন করার বাল্কহেড ভিড়ছে আর বালু ভর্তি করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে বালু ভরাটের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে।

লঞ্চঘাটের ওপারে সুগন্ধা নদীসংলগ্ন কিস্তাকাঠি গ্রামের বাসিন্দা মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলাম বলেন, খননযন্ত্রের সাহায্যে বালু তোলায় নদীতীরের মাটি ধসে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রামের খেয়াঘাট ও মসজিদ নদীতে বিলীন হয়েছে।