সুনামগঞ্জে থইথই পানি, বন্যার আরও অবনতি, পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ

সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার প্রায় সব উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে পাঁচটি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জেলায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

উজান থেকে ব্যাপক পরিমাণে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত আছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা এখন প্লাবিত। সুনামগঞ্জের সব কটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এখন আবার দ্বিতীয় দফায় বন্যায় মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পানি বাড়ছে, আর পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জেলার লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দী। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত আছে।

তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জ শহরের সড়ক
ছবি: প্রথম আলো

প্রশাসন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খারাপ। ছাতক পৌর শহরে এখন হাঁটুপানি। ছাতক শহরের সঙ্গে সব ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

মানুষের বাড়িঘর, দোকান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস—সর্বত্রই এখন বন্যার পানিতে প্লাবিত। একই অবস্থা দোয়ারাবাজার উপজেলার। এ উপজেলা সদরের সঙ্গে সব ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন আছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভাসহ সব কটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত।

জেলা সদরের সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, ছাতক উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানি ঢুকছে মানুষের বাড়িঘরে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মানুষ।

২০০৪ সালের পর শহরে এভাবে আর কখনো এত পানি হয়নি
নাদের বখত, মেয়র সুনামগঞ্জ পৌরসভার
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ শহরের মগবাজার এলাকার পরিস্থিতি
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, গত মাসের বন্যার চেয়ে এবারের বন্যা ব্যাপকতা আরও বেশি। ইতিমধ্যে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অসংখ্য বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। পানি বাড়ছে। মানুষজন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন। চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানি আরও বাড়লে পরিস্থিতির মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার ওপরে আছে। সুনামগঞ্জে বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৮০ মিলিমিটার। একই সঙ্গে উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ছে। গত ১৩ মে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয়। ব্যাপক ক্ষতি হয় মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মাছের খামারের। এখন আবার দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেওয়ায় মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন।

সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া এলাকা। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রহমান বলেন, ছাতকে শুকনা মাটি নেই। সর্বত্রই পানি। অবস্থা শোচনীয়। শহরে হাঁটুপানি। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে মানুষজন আশ্রয় নেওয়ার জন্য।

দোয়ারাবাজারের ইউএনও ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, দোয়ারাবাজার পুরোটাই বন্যাকবলিত। তাঁরা প্রয়োজনীয় ত্রাণ বিতরণ করছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সহায়তার জন্য ২৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ২০ মেট্রিক টন করে। চারটি পৌরসভায় দেওয়া হয়েছে ৩০ মেট্রিক টন। এ ছাড়া নগদ ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব বিতরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ শহরের সব এলাকা প্লাবিত

সুনামগঞ্জ শহরের উকিলপাড়ায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ শহরজুড়ে এখন থইথই পানি। শহরের এমন কোনো এলাকা ও সড়ক নেই যেখানে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়নি। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলফাত স্কয়ার থেকে শুরু করে নবীনগর পর্যন্ত পানি আর পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও এর চেয়ে বেশি পানি। কাজীর পয়েন্ট এলাকায় পানি বেশি থাকায় সেখানে নৌকার যাতায়াত করেছেন লোকজন।

২০০৪ সালের পর শহরে এভাবে আর কখনো এত পানি হয়নি বলেও জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত।

সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

শহরের ষোলঘর এলাকার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, শহরের সড়কগুলোর মধ্যে এখানে পানি বেশি। দোকানে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো বন্ধ। আগেও এখানে পানি হয়েছে, তবে এতটা হয়নি।

শহরের মমিনুল মউজদীন সড়ক, মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন রোড়, মুক্তারপাড়া, আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, নতুনপাড়া, সমবায় সুপার মার্কেট, মধ্যবাজার, ষোলঘর, হাসনগর, বড়পাড়া, হাজীপাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী এলাকায় বন্যার পানি দেখা গেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন